কবিতাগুচ্ছ * গৌরীশঙ্কর দে
মেটামরফোসিস
মনে রোগ ধরে গেছে, মনোরোগ
বিশেষজ্ঞের পরামর্শে
বেরিয়েছি টানতে মনোযোগ,
লতানো হাতের আকর্ষে।
বুকে টেনে নিয়েছি তোমায়
ঠোঁট দিয়ে খুলেছি বোতাম,
তোমার চোখের বন্যায়
ঝাঁপ দিয়ে নিজেকে পেলাম।
হাবুডুবু খেয়ে নোনা জলে
সমুদ্রঘোটক হয়ে, ডলফিন,
শেষে দেখি কখন আঁচলে
লেগে আছি শীর্ণ সেফটিপিন !
বাদামি সারস
কোকিলের ডাক আমার বিরক্তিকর মনে হয়।
লিবিডোর শিল্পে আমি বিশ্বাস করি না বলে নয়,
যে কোনো নিরলসের বিরুদ্ধে আমার মদালস
সেরিবিলামের থেকে উড়ে যায় দীঘল সারস।
কোকিলের গলা খুব কর্কশ বলে সে ঊর্ধ্বে গলা তুলে ডাকে।
কুমার গন্ধর্ব অনুধাবন করেছিলেন স্যানেটোরিয়ামে এক ফাঁকে
তারপর ফুসফুস একটি বিকল হলে তাঁর,
মায়া মহাঠগিনীকে করলেন পুনরাবিষ্কার ।
আমার লতানো ছায়াতন্তু বলে বসন্তে কোকিল স্তব্ধ হলে
প্রলয়ের সম্ভাবনা অনেক নিবিড় হয়, সেই ভয়ে আমি
কোকিলের কুহুতান বেগুন ও নিমে তেলে জলে
ভেজে খাই, মনে ভাবি মিথ্যে এক ফাঁসির আসামী।
রাষ্ট্রপতিকে প্রাণভিক্ষার আবেদনে দস্তখত করে ঘুমের খোঁড়লে
ডুবে যাই কাক ভোরে স্বপ্নে ছোটে ঘোড়া আর সারস বাদামি।
অহংকার
'হাইডেলবার্গে আমার জানালা দিয়ে আল্পস দেখা যায়।' কবি অলোকরঞ্জন দাশগুপ্তের স্ত্রী ট্রুডবার্টা নাকি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে বলেছিলেন। উত্তরে শুনেছি (বিশ্বাস করিনি) এ প্রসঙ্গে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় জনৈক কাউকে বলেন, 'আমার পারিজাতের ন'তলার ফ্ল্যাট থেকে হিমালয় দেখা যায়।' আর আমি ৩নং নর্থ রোডে প্রণবেন্দু দাশগুপ্তের বাড়ি গেলে প্রণবেন্দু বাবুর তদানীন্তন স্ত্রী ম্যারিআন ম্যাম দরজা খুলতে খুলতে বলতেন, 'পারহ্যাপস্ দ্যাট চ্যাপ হ্যাজ কাম উইথ এ ব্রাইট মুড আই থিংক।' 'এখন এই তিনটি কথার মধ্যে মিল কোথায়?' মীর বলে উঠতেই, অপূর্ব বললো, (ম্যারিআনের প্রসঙ্গে আমাকে ধরে) 'সবাই একটাই পর্বতশৃঙ্গের কথা বলছে, যার নাম অহংকার।'
মানুষের অহংকার পর্বতের চেয়েও সুমহান। অভ্রংলিহ তার শিখর। রাজার দুর্লঙ্ঘ নিয়তি। অ্যাবসারডিটি সেখানে যেখানে প্রতিনিয়ত রাজার বিচরণভূমি। নিত্যকার অদ্ভুত অভ্যাস।পিকনিকে বেগুনির অব্যর্থ উপস্থিতির মতো নিত্য মালাকার। নিত্য পুরাতন ম্যাজিক দেখাতো। প্রতিটি খেলার আগে সে জাদুদন্ড ঘুরিয়ে রাজার বেশে বলে উঠতো, "Magic is nothing but cultural of science." এখন আমরা বলি 'জাদুবাস্তবতা'। উভোতল অসংখ্য দর্পণে প্রতিফলিত একটিই মুখ, কখনো ট্রুডবার্টা, কখনো সুনীল কখনো ম্যারিআনের স্বগতোক্তি ধরে আমি। মৃতদের নিশ্চল হিমবাহের আড়ালে যা স্মৃত্যাশ্রিত। এইখানে অহংকারের আগমন পর্বতশৃঙ্গ থেকে, সিসিফাসের পতন। আরশোলার উল্টে যাওয়া, কাফকার কামুতে রূপান্তর কিনা কে জানে!
মায়াবন্দর
মাতালের মাথা থেকে মা সরিয়ে নাও
তালে পাবে তাকে। মা বড়ো রোমাঞ্চকর
শব্দ। ওই শব্দে ঘুম আসে, পাতালের
দিকে চেয়ে থাকে রসাতল। তার রস
নিংড়ে নিলে অতলকে পাবে। অক্ষরের
অমৃত মোচ্ছবে কচ্ছপেরা গুটিগুটি
এসে জিরাফের সঙ্গে কথা বলে।
এ দৃশ্যটি যে কী সুন্দর দেখেছি, আজ
কোথায় তা ভুলে গেছি সম্ভবত মায়াবন্দরের
জেটিঘাটে। যেখানে নোঙর করা জাহাজেরা রাতে
কথা বলে হাওয়াবিল পাখিদের সঙ্গে উড়ে উড়ে।
সমুদ্রে তুফান বয়ে যায়। দুটি নারিকেল গাছ
বালুচরে বাসা বাঁধে, ডিগলিপুরের দিকে যেতে।
নৌকায় জলের বুকে চলতে চলতে কঞ্চি হাতে--
সহসা ফসফরাস জ্বলে ওঠে যেইসব রাতে।
জলতরঙ্গ বাজো
জলতরঙ্গ কোমড় ভেঙে নাচো।
নাভির বাটি নানান আকারের,
জলতরঙ্গ হে, বাৎসায়নের
সূত্র ধরে পেটের দায়ে বাঁচো।
******************************************************************************************************




চমৎকার!
উত্তরমুছুন