ছোটন গুপ্ত * গুচ্ছ কবিতা
টের
থমকে গেছে রাতের আকাশ একলা জেগে থাক,
রাত্তিরে মেঘ হারিয়ে গেলে তোকেই ফিরে ডাক।
যা ছিল সেই যৌবনে আজ নেহাত ধুলোবালি
দুয়োর বন্ধ রাতের শব্দে হাপর টানছে খালি।
ঠোঁটের চুমুর দিন ফুরোলে স্মৃতির শব্দ জুড়ে
শিল্পী তুলি রঙ আলাপন ক্যানভাসে রোদ্দুরে
পায় না ছোঁয়া স্বপ্নে ধোয়া তিনপুরুষের ছবি
এখন বেজায় শান্ত মনন, শব্দে ভেজায় কবি।
উত্তাপহীন আখর যতো লেখায় নির্বিবাদে–
প্রিয় মানুষ ওড়ায় ফানুস আকাশ ডানার সাধে।
এখন আকাশ আর হাসে না, বাতাসে নেই গতি
জীর্ণ শরীর আর্তি ছড়ায়, করবে না আরতি।
মধ্যরাতের পদ্য যতো থাক একা ঘুমঘরে
কোন ছেলে কোন মেয়ে আজও পড়ছে তারস্বরে ?
ফাল্গুন মাস পলাশ আগুন তাও তো জ্বলে ফের
কবির কলম রোজ খুঁজে যায় সৃষ্টি সুখের বেড়।।
মনের কথা
যখন আমার কেউ থাকে না কাছে
কিস্যু আমার ভাল্লাগে না আর।
অন্ধকারে কোনখানে কে আছে
খুঁজে বেড়াই, ভীষণই দরকার।
উথালপাথাল আকাশ জুড়ে মেঘ,
বুকের মধ্যে কষ্ট জমাট হয়।
কেমনতরো অন্তরে উদ্বেগ
কোনখানে পাই তোমার বরাভয়!
মনের খোঁজে এপার ওপার যাওয়া–
গাছতলাতে সবুজ ছায়ার বাস।
রাস্তা ওড়ায় উড়নচন্ডী হাওয়া,
চোখ বুজে সেই একটি মুখর-ভাস।
ডাক দিয়ে যাও দূরের থেকে দূরে…
কবে যে ফের সামনে অপরূপ!
যে গান ছিলো নদীর স্রোতের সুরে
সেই নদী তীর একলা বৃষ্টি ঝুপ।
ইচ্ছে করে একছুটে যাই কাছ
নদীর খেয়ায় ভাসাই ডিঙাখান–
তোমার চাওয়া আকাশ দিলে আঁচ
সাঁতারে যাই কাটাই স্রোতের টান।
নীল আকাশের মেঘবাসাতে লিখি
ভালোবাসার আবেশমগ্ন রেশ।
সামনে এলে ওষ্ঠে আলাপ শিখি
ঘুম ভেঙে চায় আসঙ্গ আশ্লেষ।
অসুখ কথা
স্তব্ধ ঘাতক ডেকে বলে
ভালো আর থাকতে দেবে না।
জ্বরের শরীরও টলমলে
ঘুম ছাড়া কিস্যু নেবে না।
ইদানিং বয়সের ভারে
সহনশীলতা কমে আসে,
আঘাত কি আর দিতে পারে
বৃষ্টি ঝরুক ক্যানভাসে।
এখন তো কথাদের খরা
কিছুই লিখিনি কতদিন।
থমকে মুখরা অন্তরা
বেড়ে চলে অসুখের ঋণ।
ঘুম ঘুম সন্ধে সকালে
স্বপ্ন হারিয়ে যেতে যেতে
বিপদসীমানা মগডালে
শুয়ে থাকি নিজের আলসেতে।
নব্য কালিদাস
মেঘ যদি খুব জাঁকিয়ে বসে
চাঁদ কি করে কোমর কষে
উঠবে বলো আকাশে !
কার মুঠোফোন ঠিক অকারণ
ছড়িয়ে দেয় জোছনা চারণ
নয়া কালিদাস সম্ভাষে–
লিখতে বসে মেঘদূতম্ আর
অভিজ্ঞানম্ শকুন্তলার
বার্তা খোঁজেন আহ্লাদে।
শকুন্তলাও কি আর করেন,
মেঘ আবেগে চাঁদকে ধরেন
বলেন কবি, পাল্লা দে।
কবির তখন লেখার বাতিক
মশক মাছি মারছে হাতি
বলছে কবি, রাখ কলম।
কালিদাসের রুক্ষ মেজাজ
মেঘ আকাশে নেই কোনো কাজ
চাঁদ ঢাকা রাত স্বর কেবলম
মানবে না যে যাক চলে
বৃষ্টি রাতেও চাঁদ তলে
খুঁজতে বসে নতুন দিক।
সারকথা কে বলবে আর
প্রেমের কাব্যে শব্দ তার
চলতে পারে, চলবে ঠিক।।
বাউন্ডুলের ইচ্ছেরা
সারাদিন বকে ইচ্ছেরা ডেকে
চলে যেতে বলে পথে।
কতোকাল ধরে আছি মুখ ঢেকে
ভালো না লাগার রথে।
উড়ে যায় দেখি ডানা মেলে পাখি
দিগন্তে নীলাকাশে
অচিনপুরের পথিক একাকী
বলে যায় ভালোবাসে।
ঘুম ভেঙে গেলে ভোরের আঁচলে
আঁধারে জাগবে আলো।
হাসির আদলে শিশিরের জলে
মেঠো পথে হাঁটা ভালো।
চেনা ঘরবাড়ি ছেড়ে তাড়াতাড়ি
চলে যাবো তোর কাছে।
স্বপ্নের ডাকে ঘুম নামে ভারী
ইচ্ছেরা পড়ে আছে ।
আকাশের মেঘে বৃষ্টির আবেগে
কাকভিজে ঘরে ফেরা।
হারিয়ে এসেছি মিছে গতিবেগে
রোদ্দুর ছায়া ঘেরা।
আজও আনমনে ছুটে চলে যাওয়া
চেনা পথঘাট ভুলে
বৃষ্টির গানে তোকে খুঁজে পাওয়া
ইচ্ছে বাউন্ডুলের।।
*******************************************************************************************





খুব ভালো লাগল।
উত্তরমুছুন