উদয় ভানু চক্রবর্তী / দু'টি কবিতা
ঝরা পাতার মর্মর
১)
এই যে দিনের পর দিন তুমি সৃষ্টি করে চলেছো দুঃখগুলো,
ভেতরের অবাক বৃষ্টিহীনতা, পাক খেয়ে ওঠা ধুলো
অথবা ঝরা পাতার মর্মর এসব-
অথচ প্রতিটি বিষন্ন বেলার শেষে ভাঙ্গা সাইকেলে আমি
ফিরে আসি তোমারই কাছে-
তুমি লক্ষ্য করো না,
অনিবার্য বলেই?
২)
বহুদিন পর মনে হলো তুমি এলে,
আমি ভালবাসা আর বন্ধুত্বের ধ্বংসস্তূপের মধ্যে বসে
ভাবছিলাম এবার হয়তো জানালা খুলবে,
ছিঁড়েখুঁড়ে যাবে অন্ধ সময়-
চুইংগাম চিবোতে চিবোতে ভাবছিলাম নিঃসঙ্গতার কথা,
আকাশের ওই বিস্ময়কর আলো, শহরের ব্যর্থ নিকাশি-
কই, সাড়া তো দিলে না তুমি,
অথচ এই উদ্বেগ আমার!
৩)
রাত্রির ভেতর কিছু শব্দ জেগে ওঠে,
ঝিঁঝিঁর গান, প্যাঁচার ডাক, কুয়াশার পদাবলী,
কবি লিখে যাওয়ার পর এসব নিয়ে খুব মাতামাতি হয়,
তাতে চমকিত হওয়ার পরও তুমি সুন্দরের অপেক্ষায়-
একটি মিলিয়ে যাওয়া ছায়া এসে পড়ে তোমার খুব কাছাকাছি,
তাকিয়ে দেখ প্রিয়তম-
সে ছায়া তোমার প্রাচীন প্রেমিকার!
তরঙ্গ
সমস্ত ছোটো বড় ঢেউয়ের ভাষা বুঝতে বুঝতে
বেমালুম নিভে গেল মুখরতা-
বেলা গড়ায়,
ঘন এলোকেশের গায়ে তারিখের কত কাটাকুটি!
কাঁপা কাঁপা ঠোঁটের কুন্ঠা-
খেজুর পাতার মত লুকোনো লজ্জা নিয়ে সরু রাস্তার বাঁকে
মসৃন চিলতে অবকাশটুকু, সেভাবেই হয়তো-
ঘুম ভাঙ্গার পর টোল পড়ে ঝাউবনে,
মুচকি হেসে মুখ লুকায় লালচে সন্ধ্যা!
উত্তাল ঢেউয়ের মাথায় সাদা ফেনীল বুদবুদ,
বৌঢুবি খালের ধারে রঙচঙে ভালবাসার মতো লাগামহীন,
তবু ক্ষনিক যেন!
শোঁ শোঁ তুমুল বাতাস উড়িয়ে নিচ্ছে সব সব, খড় কুটোর মতো-
অন্ধকারের ইজেলে দু'একটা নির্লজ্জ নক্ষত্র উপভোগ করছে
তালসারী রাতটা-
কী নিঃসীম কুহকী!
এভাবেই আমার সমুদ্র সমুদ্র ভাব করে এক এক দিন,
অথচ তখনই দেখি নির্জন তটভূমি জুড়ে ধূ ধূ বালি-
আর দ্রুত অদৃশ্য হতে থাকা রূপোলী মৎসকন্যা-
সেকি তুমি?
নাকি দমকা এক গুচ্ছ কবিতা !!!
******************************************************************************************************



তিন স্তবকে অনন্য অলংকার সমৃদ্ধ "ঝরা পাতার মর্মর", ত্রিশূল হয়ে অনুভূতির আবেশে চরমভাবাপন্ন করে তুলতে সক্ষম হল।
উত্তরমুছুনআর "তরঙ্গ" অতি আন্তরিকতায় ভরপুর কল্পনার চিত্রনাট্য মনে হল। এমন স্বতন্ত্র লেখার মাধ্যমে পত্রিকার মান বৃদ্ধি পায় বৈকি।
আপ্লুত
মুছুনএই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।
উত্তরমুছুনকবি উদয়ভানু চক্রবর্তীর কবিতায় একটা অমলিন গতিময়তা আছে যা সবকিছু ছাপিয়ে জসিমুদ্দীনের রুপাইয়ের মত রূপকল্পে বিমুগ্ধ করে।কবিকে অসংখ্য শুভেচ্ছা ও শুভকামনা জানাই।।
উত্তরমুছুন