কবিতাগুচ্ছ * গৌতম কুমার গুপ্ত
একটি ফুলের জন্ম হলো
একদিন ফুল ফোটা দেখলাম
চুপিসারে রাতজেগে
তোমাকেও
পরাগের অভিসার
যৌন সম্মোহনে বিদ্বান ও বিদুষী
আঙুলে চাক্ষুষ ইংগিত উপমা
নদীর মতো বইতে বইতে থামলো আগুন
স্বেদকম্প শরীরে থামলো ঢেউ
কি নিপুণ ছিল ঝড়ের কাহিনী পাতা ওড়া
ফুলে মৌ উড়ছে
পাপড়ি পাখায় রেণু
তমালে কামিনী বাঁশি মুদু মৃদঙ্গ
রাতচোরা পাখি উড়ে গেল
নিশীথের ডাকে
ক্রমশঃ
একটি ফুলের জন্ম হলো
হলুদ প্রজাপতি
এই তো এখানে উড়ছিল হলুদ প্রজাপতি
একটু মিহি রোদ ভাসছিল
এখানে ছিল কপিন নেলপালিশ
দু একটি বোতামের হাতসেলাই
এখানে হারমোনিয়াম ও পায়েল ছিল
বৃষ্টির আগুনে ভেজা আঁচে
ভালবাসায় ধুয়ে যাচ্ছিল বীজত্বক
একটু লীনতাপ
এবার অঙ্কুরোদগমে ফুল ফুটছিল
আর হলুদ প্রজাপতিটি উড়ে যাচ্ছিল
শহরে গ্রামান্তরে
কষ্টলিপি
কষ্ট হয় তবু
'ভালোবাসি' কেটে কেটে উচ্চারণ করি এখন।
ঘৃণার অক্ষরগুলি চলে আসে জিহ্বায়
ছিঃ,থুৎকার কত কিসে হোঁচট খায়।
উষ্ণতায় সজস্র তর্জনী দেখি কেবল
চুল টেনে কথা বলে অদৃশ্য আঙুল।
ঢোঁক গিলে দেখি
'ভালবাসা 'আড়ষ্ট অসাড় কথালিপি।
শবদেহে চেনা মাছি ওড়ে ভনভন
প্রতিদিন কফিনে আমার মৃতদেহ কারা বয়ে নিয়ে যায়
আজ
দুঃখিত, আজ আর কিছু লিখতে পারছি না
অন্ধকারে ভাসছে স্নায়ুতন্ত্র
ছিঁড়ে যাচ্ছে নিউরোন
কলম নিভে আছে
জলের স্রোতে
এই বেশ জল বুঝছি এখন
বুঝছি নৌকো ও পারাপার
একা একা বর্ণমালা আমার কাগজে
মগজের ক্ষত থেকে সাইকোসিস
মেধার দূষণে বয়ে যাচ্ছে
অসময় এবং কলমের বিষ
অতীত
এবার পাখির ঠোঁট থেকে
গল্পগুলি ঝরে পড়ার আগেই
অাঁচল পেতে আছে অভিলাষা
সে যদি খুলতে খুলতে আসে
পরতে পরতে জমে যাবে ভালবাসা
তার জোৎস্নার শরীরে ঝরে
আগুনের শিখা
পলকে পলকে বাড়ে আহুতি
চুপিসা্রে বাসা বাঁধে
কোন একদিন অতীতের স্মৃতি
সারাংশ
অবগুন্ঠনে ঢাকা মুখের সারাংশ
সেখানেই আমার আত্মগোপন
সেখানেই উপভোক্তা আমি ত্যাগ ও তিতিক্ষায়
চাঁদ ধুয়ে ধুয়ে আমন্ত্রনী নিশীথে
খন্ড মেঘের জ্যোৎস্নাকে ডেকে আনি কখনও
অন্তরাত্মার ভেতরে ছায়া সূক্ষ্মতায়
আনন্দ স্মরণীয় ক্ষণিকের চোখ মজে থাকে অন্তরীণ হাসির অবগাহনে
দিগভ্রান্ত হই নি কখনো অবসাদে
সুনিবিড় মায়াবনে অবগুন্ঠনবতী এলে
ঢেউয়ের উতরোলকে ডেকে আনি আঙিনায়
উচ্ছ্বাসে আমি বাধভাঙ্গা বেপরোয়া হয়ে যাই
তবু সুকঠিন সুমহান
আভিজাত্যে মুড়ে রাখি অপ্রকাশিত অবগুন্ঠন
এবং
মুখের সারাংশ
চলো
চলো না পারি
ক্ষতি করে আসি
লাভ নেই গুড়ে আর
পিঁপড়ের দল দিয়েছে সারি
আমি কি বাছা চুপ থাকতে পারি
কিছুই হল না যখন
নামটা গিয়েছে ডুবে
ফিরে আর পাবো নাকো জানি
আহা,একদা ছিলাম শ্রী মানী
গালাগাল খাই এখন চরমে
কি হবে আর নরমে
বরং ক্ষতি করে আসি চলো
আমাকে হিটলারই না হয় বলো
অসুখ
মুখের গহ্বরে
সত্য মিথ্যা দুটোই খেয়ে নিয়েছি
যখন যেটা প্রয়োজন
সত্যাহারে কোন বিকল্প নেই
এ সহজ শাশ্বত
চাই মিথ্যের আগুনে পুড়ে যাক
এ জন্মের আহুতি
জিভে লেগে আছে অন্ধকার
জামায় লেগে আছে আলো
নিজের রসনায় তবু স্বার্থপর লিখি
আমি আজ ঋণজর্জর
সত্য দাও হাত পেতে আছি
দ্যাখো
শঙ্খনাদে ভেসে যাচ্ছে আমার অসুখ
********************************************************
জন্ম ১৩৬৭ বঙ্গাব্দে বাঁকুড়া জেলার শালতোড়া থানার গোপালনগর গ্রামে।বর্তমানে পশ্চিম বর্ধমান জেলার দুর্গাপুরের বাসিন্দা।প্রথম জীবনে সাংবাদিকতা পরে ই সি এলে কেন্দা এরিয়া বিভাগের কর্মী ছিলেন।২০১৯ সালে চাকুরিজীবন থেকে অবসর গ্রহন করেন।শিক্ষাগত যোগ্যতা বিজ্ঞান এবং কলা বিভাগে স্নাতক।পরে পার্সোনাল ম্য্যানেজমেন্ট ইনডাসট্রিয়াল রিলেশনে স্নাতকোত্তর পাশ করেন।আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে লেখালেখি শুরু।'কালকেতু' নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করতেন।বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তো বটেই ওয়েব ম্যাগাজিনেও গল্প কবিতা প্রবন্ধ লিখে থাকেন।এ পর্যন্ত তাঁর চারটি কাব্যগ্রন্থ " সময়ের এই জলসাঘরে,'স্বভাবের সিলেবাস','অক্ষর ভাইরাস' এবং 'বিষুবরেখার পাখি' প্রকাশিত হয়েছে।কয়েকটি নাটকও লিখেছেন। ইতিমধ্যে "কয়লাক্ষেত্র "এবং কৃষ্ণগহ্বর নামে দুটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে।।শীঘ্র একটি কাব্যগ্রন্থ 'যদি হৃদয়ের কথা বলো'প্রকাশিত হতে চলেছে।



কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন