পোস্টমর্টেম
প্রতিমা রায়
সাটার ডে গুলো একটু অন্যরকম কাটে ডাঃ সান্যালের। দমদম থেকে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন বারাসাত হয়ে বনগাঁ, বাংলাদেশ বর্ডার পর্যন্ত যেসব পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রি আছে, তাই ভিজিট করতে। সপ্তাহে পাঁচ দিন ইউনিভার্সিটিতে ক্লাস নেন, বাকি দুদিন প্রাইভেট প্র্যাকটিস।
পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিগুলোতে মুরগির চেক আপ, ভেক্সিন সঙ্গে আর একটা কাজ করতে হয়, রোগ নির্ণয়ের জন্য একের পর এক মারা যাওয়া মুরগির পোস্টমর্টেম। কিডনি লিভার কেটে বডি পার্টস আলাদা করে অনুবীক্ষণ যন্ত্রে্ দেখে নিতে হবে, সেজন্য হাতে সার্জিক্যাল গ্লাভস পরে ছুরি নিয়ে রেডি হয় সান্যাল। ফোন বেজে ওঠে- দাদা, আমি সুপ্রতিম বলছি।
হাঁ বল
দাদা, সোমবার তো ইউনিভার্সিটিতে কন্ট্রোলার অব এগ্জামিনার নির্বাচন।
হাঁ।
তুমি অ্যাপ্লিকেশন করলে না?
না, তোরা করেছিস?
হাঁ। তবে ভিসি জানালেন এবার প্রচুর ক্যান্ডিডেট।
মরা মুরগিগুলো অপারেশন টেবিলে তুলে নিলেন স্যানাল।
সুপ্রতীম বলে চলেছে – এবারের নির্বাচন ঘিরে বেশ জলঘোলা হবে।
কেন?
হবে না? এতো অ্যাপ্লিকেশনের মধ্যে যেমন ভিসির নিজের পছন্দের প্রার্থী আছে, অন্যদিকে অধ্যাপক সংস্থা, ওয়েব কুপার পছন্দের প্রার্থী থাকবে, বিরোধী দল চাইবে তাদের নিজেদের লোক আসুক, রুলিং পার্টির প্রেসার থাকবে। এদের মধ্যে থেকে ভাইস চ্যান্সেলরকে একজনকে বেছে নিতে হবে।
হাঁ ঠিক তো। তারপর শব ব্যবচ্ছেদ করে ডাঃ সান্যাল রোগ নির্ণয়ের জন্য তা অনুবীক্ষণ যন্ত্রের তলায় নিয়ে এলেন।
আক্ষেপ ঝরে পড়ে সুপ্রতীমের গলায়। পোস্ট পেলে সম্মানের। নাহলে তো আমাদের প্রফেসরদের কি আর মান্যতা, একটা বসার ঠিক করে রুম পর্যন্ত নেই। আর ও কত নেই, কে শুনবে এসব কথা। সব্ মরা প্রফেসর!
সান্যাল রোগটা জানিয়ে দেন। ভাইরাস ঘটিত রোগ, ফ্লু। তারপর মরা মুরগিগুলো ফেলে দেন।
সুপতীম নিঃশ্বাস ফেলে। বলে দাদা যদিও এসব এক্টিভ পোস্ট, ভিসি মনে করলেই একজনকে সরিয়ে অন্য কাউকে বসাতে পারে। তবুও কন্ট্রোলার এগ্জামিনার একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট। এখানে একজন যোগ্য লোকের দরকার। না হলে বিশাল ক্ষতি।
পোল্ট্রির লোকজন মরা মুরগি সযত্নে তুলে নেয়। সান্যাল বলে- এসব মরা মুরগি কি হবে? পচন এসে গেছে তাড়াতাড়ি সরিয়ে দেন।
পোল্ট্রির লোকজন জানান এসব মরা মুরগির ভালো ডিমান্ড, ভালো বাজার আছে। একদল লোক এই মুরগির রমরমা ব্যবসা করে। বিভিন্ন জায়গায় সাপ্লাই দেয়, এসব ফেলতে পারবো না।
আর মানুষের স্বাস্থ্য? ওতে তো ক্ষতি হবে।
মানুষের ক্ষতির কথা অতো ভাবতে নেই!
************************************************************************
প্রতিমা রায়: কথা সাহিত্যিক ও গদ্যকার । আনন্দবাজার রবিবাসরীয়, দেশ ওয়েব ম্যাগাজিন, কিশোর বার্তা,অপার বাংলা সহ নানা পত্রিকায় লিখেছেন। জন্ম পশ্চিম মেদিনীপুরে হলেও থাকেন ইছাপুরে। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ও বি.এড। প্রথম উপন্যাস গাঙচিল প্রকাশনী থেকে "অন্দরে কোয়ার্টার জীবন", প্রথম গল্প সংকলন 'ছিপ " সৃষ্টি সুখ প্রকাশনী।



কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন