কবিতাগুচ্ছ * অশোক কুমার দত্ত
জীবনানন্দ ও আমি
মাঝে মাঝে একটা ঝিমধরা বিকেল
একটা ম্লান গোধূলি
একটা মজে যাওয়া নদী আর আমি মুখোমুখি বসে
পুরানো দিনের গল্প করি !
একটা ঝাঁকড়া বুনো তেঁতুলের গাছ
একটা ভাঙা টালির বাড়ি আর ক্রমে ক্রমে
ধূসর হয়ে যাওয়া ধানক্ষেত মাঝে মধ্যে
আমাদের কাছে আসে !
তারপর
একদিন সাদা চাঁদ ওঠা অপরূপ গোধূলিতে
আমরা সবাই মিলে ঈশ্বরের কাঁটাতার দেওয়া
আমবাগান আর সীমানা পেরিয়ে মুক্ত আকাশের দিকে হাঁটি ।
দেখি -- বৈতরণী নদীটির ধারে জীবনানন্দ নিচু হয়ে
আমাদের মতো বেবাক জীবনের চালচিত্র খুঁজে বেড়াচ্ছেন ।
অপরূপ পলাশ-১
কেন আঁধার ঘর আলো হলে বসন্তের নবীন পাতা কেঁপে ওঠে
চরম আশ্বাসে ?
কেন নৈশব্দের ছায়া হঠাৎ ভেঙে পড়ে
গৃহীর উঠোনে বিপরীতমুখী শোকের
নির্মম আবহে ?
পরিশ্রান্ত সাধারণ মানুষ জানে না কিছুই --
সে শুধু সংবাদে মহান মানুষদের দুঃখ ফেরি করে !
তবুও
ছায়াময় এই সব মানুষেরা এই রিক্ত শহরে একা একা
হেঁটে গেলে কেন নীরবতা শব্দ খোঁজে বনবীথির গাছে ?
দুঃখের সোনা ঝরানো বয়স কুড়িয়ে পায়
শৈশবের হারানো সকাল উজ্জ্বল রোদের কাছে --
প্রকৃতি ও উন্মাদ নির্মোহ হয়ে আজ
এই অনিবার্য সত্য জেনে গেছে !
অপরূপ পলাশ-২
অবিশ্রান্ত বিষন্নতার প্রান্তর পার হয়ে
সূর্য ডোবা ম্লান আলোর হাতে তুলে দেই
রুপালি চাঁদের মোহময়ী হাসি !
প্রথম শীতের ঝরাপাতাদের ডেকে ডেকে বলি --
এই নাও সমাগত বসন্তের নরম কচিপাতা বাঁশি !/
আসলে
জীবন তো এভাবেই এগোয় ---
বিশু পাগলের হাতে তুলে দেই
ফেরার চাবিকাঠি ।
আমি না থাকলে সে ই তো বাজাতে
পারে দুঃখী মানুষদের জন্যে মুখর
জীবনের আনন্দ- ভৈরবী !
অপরূপ পলাশ-৩
অথচ
সবাই পালায় --সবাই পালাতে চায়
ছায়াময় গ্রাম থেকে বিষণ্ণ শহরে
বিষণ্ণ শহর ছেড়ে অন্য কোথাও
অন্য কোনো দূরে ! এভাবেই একার
মানচিত্রে গড়ে ওঠে মানুষের নিজের
পৃথিবী -- ক্রমশ একলা হতে থাকে নিজের
থেকে- নিজ নিজ অপরিচয়ে !
তবুও ধ্যানের ধারণাটুকু নিয়ে মানুষ
কখনো কখনো বেজে ওঠে পুরানো
মন ভুলানো গানের অশ্রুত সুরে !
"দাও আরো লাবণ্য আরো প্রাণ !"
বেঁচে থাকে শিকড়বিহীন মানুষ
নিরুপায় -- অনা সক্ত উত্তরাধিকারে !
অপরূপ পলাশ-৪
হেরে যাওয়া এক একটি ধূসর বিকেলের ভাঙাচোরা
দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আনমনে
মনে হয় -- কেউ সক্ষেদে উড়িয়ে
দিয়েছে আমার জীবনের মার্ক শি ট !
চিল্কা হ্রদের জল থেকে শরীর কাঁপিয়ে উঠে আসছে
আমার হারানো প্রেমিকা !
আর
ভঙ্গুর রাজপ্রাসাদের সব সুরঙ্গ ঠিক ঠিক
চেনার পরে থার্ড আম্পায়ারের
" ত্রি নেত্র " ব্রিফকেশ খুলে বিধাতা বললেন --
এই পৃথিবী কিন্তু তুমি আর অমিতে সীমাবদ্ধ নেই !
জীবনের সহজ পাঠ অনেক তো হলো --
এবার তো মৃত্যুর ভূমিকা !/
রঙ্গশালা
রবীন্দ্র সেতুর ওপর থেকে জ্যোস্নার তর্জনীতে
ডেকে গেছে শুক্লা চতুর্দশীর চাঁদ !
দীপ্যমান আলোর দিকে হেঁটে গিয়েছে
দিন আনি দিন খাইদের পথভোলা সময় -
রিক্ত হৃদয়ের চৌকাঠ !
কান্নার মেঘ ঘুরে যায় প্রতিদিন উদাসীন আকাশের
মগ্ন আঁধার পথে !
ক্ষুধা আর নৈশব্দের আলো জ্বলে নিত্যদিন
মিছিলে বস্তিতে আর রাজপথে !
যে জীবন প্রতিদিন বিস্মরণের রাতে আরক্ত
শ্বাসাঘাতে মাঝপথে থামে তাকে থামানো দায় !
পান্থনিবাসে একা একা বসে আছি -- জানি না কখন যে
সূর্য নিভে যায় ?

*******************************************************************************************




কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন