রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

গুচ্ছ কবিতা * অশোক কুমার দত্ত






কবিতাগুচ্ছ  * অশোক কুমার দত্ত







জীবনানন্দ ও আমি

মাঝে মাঝে একটা ঝিমধরা বিকেল 

একটা ম্লান গোধূলি 

একটা মজে যাওয়া নদী আর  আমি মুখোমুখি বসে 

পুরানো দিনের গল্প করি ! 

একটা  ঝাঁকড়া বুনো তেঁতুলের গাছ 

একটা ভাঙা টালির  বাড়ি আর ক্রমে ক্রমে 

ধূসর হয়ে যাওয়া ধানক্ষেত মাঝে মধ্যে 

আমাদের কাছে আসে ! 

               তারপর 

একদিন  সাদা চাঁদ ওঠা অপরূপ গোধূলিতে 

আমরা সবাই মিলে ঈশ্বরের কাঁটাতার দেওয়া 

আমবাগান আর সীমানা পেরিয়ে মুক্ত আকাশের দিকে হাঁটি ।

দেখি -- বৈতরণী নদীটির  ধারে  জীবনানন্দ নিচু হয়ে 

আমাদের মতো  বেবাক জীবনের চালচিত্র খুঁজে বেড়াচ্ছেন ।



অপরূপ পলাশ-১

কেন  আঁধার ঘর আলো  হলে বসন্তের নবীন পাতা কেঁপে ওঠে

চরম  আশ্বাসে ?

কেন নৈশব্দের ছায়া হঠাৎ ভেঙে পড়ে 

গৃহীর  উঠোনে বিপরীতমুখী শোকের

নির্মম আবহে  ? 

পরিশ্রান্ত সাধারণ মানুষ জানে না কিছুই -- 

সে  শুধু  সংবাদে মহান মানুষদের দুঃখ ফেরি করে ! 

               তবুও 

ছায়াময় এই  সব মানুষেরা এই  রিক্ত শহরে একা একা  

হেঁটে গেলে কেন  নীরবতা শব্দ খোঁজে বনবীথির গাছে  ? 

দুঃখের সোনা ঝরানো বয়স কুড়িয়ে পায় 

শৈশবের হারানো সকাল উজ্জ্বল রোদের  কাছে -- 

প্রকৃতি ও  উন্মাদ নির্মোহ  হয়ে আজ 

এই  অনিবার্য সত্য জেনে গেছে !














অপরূপ পলাশ-২  

অবিশ্রান্ত বিষন্নতার প্রান্তর পার হয়ে

সূর্য ডোবা ম্লান আলোর হাতে তুলে দেই 

রুপালি চাঁদের মোহময়ী হাসি !

প্রথম শীতের ঝরাপাতাদের ডেকে  ডেকে  বলি -- 

এই  নাও সমাগত বসন্তের  নরম কচিপাতা বাঁশি !/

                আসলে

জীবন তো এভাবেই এগোয় ---

বিশু পাগলের হাতে তুলে দেই 

ফেরার চাবিকাঠি ।

আমি  না থাকলে সে ই তো বাজাতে 

পারে দুঃখী মানুষদের জন্যে মুখর 

জীবনের আনন্দ- ভৈরবী !



অপরূপ পলাশ- 

                  অথচ 

সবাই পালায় --সবাই পালাতে চায়

ছায়াময় গ্রাম থেকে বিষণ্ণ  শহরে

বিষণ্ণ শহর ছেড়ে অন্য কোথাও 

অন্য কোনো দূরে ! এভাবেই একার

মানচিত্রে গড়ে ওঠে মানুষের নিজের

পৃথিবী -- ক্রমশ একলা হতে থাকে নিজের

থেকে- নিজ নিজ অপরিচয়ে ! 

তবুও ধ্যানের ধারণাটুকু নিয়ে মানুষ

কখনো কখনো বেজে ওঠে পুরানো

মন ভুলানো গানের অশ্রুত  সুরে !

"দাও আরো লাবণ্য আরো প্রাণ !"

বেঁচে থাকে শিকড়বিহীন মানুষ 

নিরুপায় --  অনা সক্ত  উত্তরাধিকারে !



অপরূপ পলাশ-৪ 

হেরে যাওয়া এক একটি  ধূসর বিকেলের ভাঙাচোরা   

দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আনমনে 

মনে হয় -- কেউ   সক্ষেদে  উড়িয়ে 

দিয়েছে আমার জীবনের মার্ক শি ট  !

চিল্কা হ্রদের জল থেকে শরীর কাঁপিয়ে উঠে আসছে 

আমার হারানো প্রেমিকা ! 

                   আর 

ভঙ্গুর  রাজপ্রাসাদের সব সুরঙ্গ ঠিক ঠিক 

চেনার পরে  থার্ড আম্পায়ারের 

" ত্রি নেত্র " ব্রিফকেশ  খুলে বিধাতা বললেন -- 

এই   পৃথিবী কিন্তু তুমি আর অমিতে সীমাবদ্ধ নেই ! 

জীবনের সহজ পাঠ  অনেক তো হলো -- 

এবার তো  মৃত্যুর ভূমিকা !/



রঙ্গশালা 

রবীন্দ্র সেতুর ওপর  থেকে জ্যোস্নার তর্জনীতে  

ডেকে  গেছে শুক্লা চতুর্দশীর  চাঁদ ! 

দীপ্যমান আলোর দিকে হেঁটে গিয়েছে  

দিন আনি  দিন খাইদের পথভোলা সময় - 

রিক্ত হৃদয়ের চৌকাঠ ! 

কান্নার মেঘ ঘুরে যায়  প্রতিদিন উদাসীন আকাশের 

মগ্ন আঁধার  পথে !

ক্ষুধা আর নৈশব্দের আলো  জ্বলে নিত্যদিন 

মিছিলে বস্তিতে আর রাজপথে ! 

যে জীবন প্রতিদিন বিস্মরণের রাতে আরক্ত  

শ্বাসাঘাতে মাঝপথে থামে তাকে থামানো দায় !

পান্থনিবাসে একা একা বসে আছি -- জানি না কখন যে 

সূর্য নিভে  যায়  ?



*******************************************************************************************



অশোক কুমার দত্ত

কলকাতা বিশ্ব বিদ্যালয়ের অর্থনীতির  স্নাতক!
নন্দন গৃহ শোভা কলেজ স্ট্রিট সহ বিভিন্ন পত্রিকায় লেখা প্রকাশিত!
দুটি কবিতার বই!
অরণ্যে জন অরণ্যে
অনুপস্থিতি র. মর্মর থেকে




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন