কুলুপ
কি সর্বনাশের কথা !
বুক ঠেলে এক গরম হাওয়া বেরিয়ে পড়ে যথা
বয়স ছেড়ে পালায় বয়স্করা
ঝুলিয়ে জামা ঈষৎ জংতারে
অনেক কালেই পালিয়েছে পরম্পরা ।
এক পৃথিবী আগুন নেভা ছাই
রিফিউজি চাঁদ পার করে জ্যোৎস্নায়
ঢেউয়ের নাচে আদ্দিকলের ভূত
ফেসবুকেও জ্বলতে দেখে খুলি
সাবধানী বাপঠাকুরদাদার চুক্তিচাষ ফুসফুস
পরম যত্নে রক্ষা করে হুক - - -
বঁড়শি বেঁধা প্রাণ সেখানে ঝোলে
সবার মুখেই ধর্মরাজের কুলুপ - - -
মানবতা
মানবতার পালক খসে গেছে
ডানায় তার কাঁটাতারের বেড়া ।
পঙ্খীনাওয়ে পালক সাজাও যদি
বোকা ভাববে মাংসাশী পাখিরা ।
ঠুকরে দেবে নিত্য নৃত্য করে
মসকরায় সাঁটিয়ে দেবে লাঠি ।
পরোক্ষণেই কুমিরচোখে জল
হা-হুতাশন ফোঁটায় দোপাটি।
কিন্তু এ ফুল ফুটবে না সেও জানি
হোঁচট সামলে টিকে থাকাটাই দায়।
আত্মঘাতী কলুর এই তো ঘানি
তেলে তেলে শুধু নেতারাই চমকায়।
তাদের হাতেই উত্থানপদ সীমা
চালিয়ে নিয়ে যাবে বলেই লক্ষ নজরানা
পরবর্তীতে প্রজন্ম ভেসে যায়
নুন ছাল গায় মানবতার নতুন আস্তানা।
বুমেরাং
সহিষ্ণুতার প্রশ্নে জেরবার ।
যে দিক থেকেই আসুক না তীর
দায়ী কিন্তু সংসদীয় সংখ্যা গরিষ্ঠতার ।
চাপান উতোর উচ্চনাদে ভেঙে যাচ্ছে সুর
ভেতর ভেতর সুড়ঙ্গ সই উদ্বাস্তু শিবির ।
তীর ছুঁড়ে দেয় বঞ্চিতরা বক্ষ দুরুদুরু
লঘু গুরুর দলমলে পা অসঙ্গে নুন ঢের
মানুষ বেবাক বহিরাগতে বেঁকে যাচ্ছে ভ্রূ
দ্ব-জাতিতত্ত্বে আর এক ভারত বিকোয় বুঝি ফের।
দিনে আগুন রাতে আগুন, কথার উদ্গীরণে
লাভাময় স্রোত বুদ্ধিজীবীর কলম বিভাজনে
স্বার্থগন্ধ অন্ধ চোখ ঝালিয়ে নিচ্ছে ব্রাশ
দেশাত্মবোধ ! বালাইষাট
চিরজীবী হোক নীরব সন্ত্রাস ।
পক্ষের পাপস্খালন রোধে মান্যতা সেই হ্যাঙ
নিজের ছোঁড়া তীরই যেন ফিরছে বুমেরাং ।
লাশ
মুখ দিয়ে নয় বুক দিয়ে একটু পড়ার চেষ্টা করো
শ্বাসবন্ধ করে দিতে কারা যেন উদ্ধত।
কারা কারা কারা ? তুমি প্রশ্ন তোলো যদি
সভ্যতা যে কি ! দ্যাখো বাঁক ফেরাচ্ছে নদী ।
তর্ক ওঠাও বাঁকের মুখে ক্লীণ্ণবীজ স্ফুরণ
বোধগম্যের বাইরে আকাশ সহস্রযোজন।
কিন্তু সেও দিচ্ছে ধরা অলিন্দ অন্তরে
পরম্পরা বাঁচিয়ে রাখে তরঙ্গ সংসারে ।
মধ্যে ফাঁকা দ্বীপের নোনায় নাশকতার ছক
ধর্মমোহের বেড়াজালে সিম্বল সই হক।
তারপরে কি জীবন চলে ?জেহাদি সংঘাত !
লৌকিকমন নোঙর ফ্যালে জান্নাতে দাসখত।
প্রাচীর স্ফালন গলগ্রহী শৈশবে দেয় তালা
পায়ে লোটোয় হিরণ্ময় মানবতার মালা ।
অলৌকিক নয় লৌকিক সব যৌক্তিক বিন্যাস
আবার কবে বুঝবে মানুষ নিজেই যখন লাশ !
ধোঁকা
উচ্চবিত্তের ধোঁকায় ধোঁয়া পাল্টাচ্ছে রঙ জামা
জাগতিক সুখ সম্পদে লোভ,চোখের পালক নামা ।
শল্কহারা বল্লারীচোখ এখন চতুর্দিক
তিনশো ষাট ডিগ্রিই ঘোরে,নাড়িয়ে দিচ্ছে ভিত।
স্বার্থসিদ্ধির পরব বেচে ধর্মের রোশনাই
প্রযুক্তি সেটুকুই শ্রেয় মান্যতা প্রশ্রয় ।
স্ফিংটার ত্বক ইলাসটিক সীমায় কতদূর ?
হত্যা করাও কাজ যদি জান্নাতে পায় হুর !
চুক্তি সইয়ে দুপুর দাপায় পুণ্য বলে কে ?
আর যাই হোক একে কি তুমি ধর্ম বলবে !
যুক্তি বুদ্ধি চুলোয় যাক মুক্তি খোঁজা পাপ
বেসুরো সব ঘাতে বাঁশির ভেঙে যাচ্ছে পাব !
*********************************************************************************************************
স্বপন নাথ
পিতা : বলাই চন্দ্র দেবনাথ।মাতা:শ্রীমতি মায়া নাথ।গ্রাম-বেটিয়ারী, ডাকঘর- নলপুর, থানা-সাঁকরাইল, জেলা- হাওড়া,পেশা- শিক্ষকতা ।
নেশা-লেখা , মূলত কবিতা ও প্রবন্ধ ।
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : আটটি। প্রথম প্রকাশ (2006)বাতুল বালিয়াড়ি। পর্যায়ক্রমে মৃত্যুজপ শীলিত পরিক্রমা, চন্দ্র হলো না,সেই হরিণী যেই হরিণী, দ্বীপজন্ম, আয়াত পেরনো জল, গ্রহণ, প্রভৃতি । সবকটিই শ্রদ্ধেয় কবি শঙ্খ ঘোষের তদারকিতে প্রকাশিত । প্রকাশিতব্য "ছিপ ধরা প্রহর "2022কোলকাতা বইমেলা ।
"আয়াত পেরনো জল" কাব্যগ্রন্থটি 2020 অন্নদাশঙ্কর রায় স্মৃতি পুরস্কারে মনোনিত হয়েছিল। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আবৃত্তি বিভাকর সম্মানে ভূষিত ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন