আমি আজো তাকে মনে মনে ভালোবাসি দীর্ঘ ভয়ে--
কচুপাতা থেকে স্খলিত জলের মতো বিপরীতে।
ময়াল রক্তের দিকে আয়ু ক্রমাগত যায় ক্ষয়ে...
বর্জিত আলিঙ্গনে ইচ্ছে পড়ে থাকে চৌচির শীতে।
উপাস্য বিনুনির প্রহর ঘেঁষে বাতাসেরা আসে,
আমাকে উগরায় তার বিরোধী মাছরাঙা হানা।
বুঝি তার ভরাট মেঘ খেয়ে গৃহী রাক্ষস হাসে,
রামধনু ভেঙে গড়ায় এদিকে বেদনার দানা।
তবু তাকে আরাধ্য করে রাখি কামনার পিলসুজে,
হৃদয়ে জ্বেলে রাখি কাঠে গড়ানো ক্লোরোফিল দিন।
অর্ঘ্য-শূন্যের চৌকাঠে অবিরাম প্রতি-প্রেম খুঁজে,
মূর্খের মতো প্রজ্জ্বলিত দাহে হাতড়াই গহীন।
বাল্য রোদের গায়ে ছেনি ঠুকে প্রেমিক হাস্যকর।
মনে মনে ভালোবাসা গড়ে দেয় সে অলীক ঘর।
আষাঢ়ের শনি
দৃশ্যাতীত রক্তের অভিপ্রায়ে পড়ে আছি সে আমি,
তীব্র কীটের দোতারা বেজে যায় কোষ থেকে কোষে।
শূন্য জয়ের লক্ষ্যে এই প্রবণতা বিপদগামী,
তবু সেই অবৈধ চেয়েছি পরাজিত আত্মদোষে।
আজ অক্ষর লাঙলের নীচে মাটির অশ্রু চুপ--
প্রত্যাখ্যাত ছায়া থেকে আহত আলো নিথর হিম।
ভেতরের দৈব বুননে তুমি উদাসীন, বিরূপ...
একাকী নীড়ে পড়ে থাকে সে প্রেম-কোকিলের ডিম।
বিপন্ন রোদ মাথায় নিয়ে বসে থাকি আড়চোখে,
দগদগে মায়া গচ্ছিত অধীর হাড়ে নেশাতুর।
যৌথ দূরত্বেই থাকি, ভাবি কি বলবে সব লোকে!
মৃত সৈন্যের মতো শিশিরে রাখি চুম্বনের ক্ষুর।
উন্মাদ শোক আহ্নিকে এসে ভুলে যায় প্রতিধ্বনি।
প্রেম আর হয় না, দূরে দাঁড়িয়ে আষাঢ়ের শনি।
বিশ্বজিৎ বাউনা। জন্ম ১৯৮৬। পশ্চিম মেদিনীপুরে। পিংলায়। ২০১০-এ বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ. (ফার্স্ট ক্লাস, সিলভার মেডেলিস্ট)। বি.এড., পিএইচডি। পেশায় এইচ এস শিক্ষক। ২০১১ থেকে শিক্ষকতা করছেন ঘাটালের গৌরা সৌনামুই কেবিএ শিক্ষায়তনে। কবিতা ছাড়াও গল্প লেখেন। পেয়েছেন 'দ্বৈরথ সাহিত্য সম্মান', 'চূনী কোটাল স্মৃতি সম্মান' ও 'বিভূতিভূষণ স্মৃতি পুরস্কার'। উল্লেখযোগ্য প্রকাশিত বই: 'ডুলুং পাহাড়ে রহস্য', 'ঈশ্বরীকে হলুদ সনেট', 'নৈঃশব্দ্যের ক্ষতগুলি', 'লুণ্ঠন শেষের শূন্যতা', 'ধুনুচি তফাৎগুচ্ছ', 'বিরসা মুন্ডা: উলগুলানের সনেটগুচ্ছ', 'অক্ষরের কালকেতু', 'বেতাল রহস্য', 'পীড়াপর্বে একলব্য' ইত্যাদি।





কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন