চ্
পলাশ দাস
পাশ থেকে যারা চলে যাচ্ছে, তারা ওদের দিকে তেমন দেখছে না। ওদের দিকে কেউ কখনই দেখে না। শুধু কয়েকজন ভালো জামা-কাপড় পরা মানুষ আসে, ওরাই ওদের দেখে। খুন্তির মাথায় হাত রাখে, স্কুলে যেতে বলে, খুন্তির ভাইকে লজেন্স খেতে দেয়। আর ওদের পুজোর সময় নতুন জামা দেয়। সেই জামা পড়ে খুন্তি সারা স্টেশন জুড়ে জোরে জোরে কয়েক পাক ঘুরে, চিল্লিয়ে শেষে ক্লান্ত হয়ে বসে পড়ে ব্রিজের পাদানিতে।
-- ‘তোর মা কোথায় গেল রে?’ জানতে চেয়েই কমলি চারদিকে একবার চেয়ে নিল। খুন্তিও চারদিক দেখল। কোথাও দেখতে পেল না। খুন্তি শুধু একবার ঘাড় নেড়ে দিল। কমলি সেসব না দেখেই কথা জুড়ল, ‘তোর ল্যাঙরাটা কি এখনও উলটে আছে? না কি এসেছিল সকালে?’
খুন্তির সারা হাতে ঘুগনির ঝোল লেগে আছে, মুখ দিয়েও খানিক বেয়ে পড়ছে। একরাশ মটর গালের মধ্যে রেখে চিবোতে চিবোতে বলল, ‘না।’
-- ‘তুই আমার সাথে চ্। তোর মা পরে আসবে ক্ষণ।’ তারপর খানিক ঝুঁকে বলল, ‘সেই ভালো জামা পরা বাবুরা আজ বিরানি দেবে। এখন থেকেই লাইন দিতে হবে। তুই চ্, আর ভাইটারে কোলে তোল। লাইনে বসিয়ে দিবি।’ বলেই কমলি পিছনের দিকে তাকিয়ে ডাকল, ‘এই পচা শোন -- ’ পচা দৌড়ে কাছে এসে দাঁড়াতেই বলল, ‘ওই যে নতুন বুড়িটা এসেছে, ওরেও দিতে হবে, তার জন্য লাইনে দিবি চ্। আগেরবারের মতো নিজে খেয়ে নিলে এমন লাথি মারব, কোমরের হাড্ডি ভেঙে যাবে। শালা ছিঁচকে চোর!’ দাঁত বার করে হাসতে হাসতে চলে গেল পচা।
এখন কমলি, খুন্তি আরও যারা লাইন দিয়েছিল সকলেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসেছে চাতালে। ওদের দু-পায়ের ওপর বিরিয়ানির প্যাকেট । বাঁ-হাতে ধরা প্যাকেটের মধ্যে ডুবুরীর মতো ডুবে যাচ্ছে ওদের ডান হাতের আঙুল।
***************************************************************************************************
পলাশ দাস
জন্ম:- 27 মার্চ, 1989,বারাসাত।
স্থায়ী বসবাস বারাসতে। পিতা- প্রদ্যুৎ দাস, মাতা- কৃষ্ণা দাস।
2018 সালে প্রথম কবিতা প্রকাশ,কলকাতা শব্দহরিণ পত্রিকায় সাত্যকি নামে(পরিবার প্রদত্ত নাম পলাশ দাস)। পরবর্তীতে নিজ নামেই লেখা প্রকাশ। লেখা বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে বা হচ্ছে।কবিকথা, কাগজের ঠোঙা,কালধ্বনি, পদক্ষেপ,সাহিত্য সৃজনী, সাগ্নিক, অবেক্ষণ, অর্বাচীন,মুখর,কবিতা সীমান্ত, আখরকথা, কবিতা নগর,ষোলো আনা, ঝিলম,ভোরের সাঁঝপথ,কবিতা কুটির, আজকের কুরুক্ষেত্র,বিবস্বান,নৌকা প্রভৃতি।


ভালো লাগলো
উত্তরমুছুনঅল্প পরিসরে খুব সুন্দর একটি গল্প।
উত্তরমুছুন