শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

ছোটন গুপ্ত

 



ছোটন গুপ্ত * দু’টি কবিতা 


ইচ্ছেমৃত্যুর খবর 

ইচ্ছেমৃত্যুর গল্পটা লিখতে বসে 

চোখ যায় সকালের দৈনিকে

বাসি পচা মৃত খবরের কবরে ওরা

খিলখিল করে হাসছিল খুব 

এ খবর পাওয়া যায় কেনা যায় চেনা যায়

সরকারি বারোয়ারি হাটে


মৃত সব আহামরি খবর জুড়ে শুধুই

ছেলেটার মেয়েটার ব্যাতিক্রমী প্রেম

কেনাবেচা ঠিকঠাক না শিখেই

চোখে চোখ এক আকাশ স্বপ্ন এঁকেছিল !


চালু আছে হিমঘরে পোষ্ট মর্টেমও

খবরের ভিতরের খবরে

মৃত্যু বিষয়ক রিপোর্ট ক্রমশ ছোট হয় 

কালকের বিক্রিবাটা ধরে রাখা

বিজ্ঞাপনী মন্দার যুগে 

থেমে যায় খয়রাতি বিবরণ ।


ইচ্ছেমৃত্যুর গল্পটা লিখেছিল স্বয়ং প্রেমিকা 

কবরে শায়িত প্রেমের খবরে উত্তেজনা

আসলে খবরটা আগে কেউ দেখতো না

সেই এক গল্প  চেনা ছক এবং ভালোবাসা 

মেনে নিলে দাম্পত্য ও অনিচ্ছাকৃত মৃত্যু

না মানলে অপঘাতে ট্রেনলাইনে

অথবা সিলিং ফ্যানে অথবা হাসপাতালে ।


মৃত সেই হাসপাতালের গল্পটা কিন্তু খবর হয়নি ।

বিজ্ঞাপন পাওয়ার দায় আছে তাই

কাল্পনিক এবং আরও কয়েক ইচ্ছেমৃত্যুর খবর


আর আছে বাকি কিছু চিতা ও কবর ।











জলকাদাময় বৃষ্টি এবং 

এই যে সময় মাঠ পেরিয়ে ঘাট পেরিয়ে বৃষ্টি ভিজে 

রাস্তা খোঁজা জলকাদাময় বিকেল জুড়ে ছুট লাগানো

বাস্তুভিটের তলাশবেলায় ঝাপসা চোখে আবছা দেখা

বাউণ্ডুলের নির্জনতায় হারতে চাওয়ার সময় তখন 

দুঃখ যখন একলা বেজায় দুঃখ নিয়ে একলাপনার হাজার 

ওজর শুনতে কে চায় 


সব কিছুকে সঙ্গে রেখে সন্ধে নামে মেঘ আকাশে 

ধূসর ছায়ায় বার্তা ছিল আসবে তো কেউ পথ চেনাতে 

থাকবে যে তার সময় জুড়ে ব্যস্ততা আর অন্য জগত

যাদের জন্য নেই কিছু নেই ধুলোয় ঢাকা শব্দ আলাপ  


খামখেয়ালের মুচকি হাসি থমকে দাঁড়ায় বাস স্টপেজে 

যা চাওয়া হয় তার তো কোনও হদিশও নেই

চলতে থাকে চলকে পড়ে দুখ ক্ষণিকের 

বুকের মধ্যে ভয় শুধু ভয় 

কেউ বলেনি ফিরতে আবার 

কেউ বলেনি এই যে গাছের বয়স কত 

আর কতকাল থাকবে অটল যেমন ছিলেন বাবা আমার 

তারপরে তার একলা যাওয়া করাত মিলে 

কাটতে চেয়ার কাটতে টেবিল আস্ত ডিভান 

নকশাকাটা যাবত নিয়েই ছুট ছুট ছুট সময়কথা 


বলতে গিয়ে থমকে যেতে হয় প্রতিবার 

আজ সে রকম উৎসবও নেই খবরও নেই 

তবুও এই একলাপনার বার্তা বিকেল ভাল্লাগে না 

হঠাৎ ফেরা লোডশেডিং-এর আঁধার নামা রাত্রি ঘন 


শিল্পী যখন ত্রস্ত বেজায় 

একটা ছবি আঁকতে গিয়ে আঁকার তুলি রং-এর খোঁজে 

ক্যানভাসে তার দাগ ফোটে না 

অস্তরাগের আবছায়াতে সত্য এখন ঘুমের দেশে 

সত্য বলাও নিষিদ্ধ তাই

নীরবতার দু'এক কথায় ভার বেড়ে যায় 


ভার বয়ে যাক সেই ছেলেটি 

সেই মেয়েটির গল্পকথা ঘুমের দেশে 

আর যা কিছু আর না বলার 

অলীক ভাবের নিশ্চলতার ভ্রমণ লিপির 

নেই বাহানায় বৃষ্টি থামে 

রাত্রি এখন আলোর খোঁজে কৃত্রিমতার নিয়নবাতি 

একখানা গান গাইতে গিয়ে থই না পেয়ে চুপ করে কে

এবং কয়েক কিশোর বয়স বাঁশিতে সুর তুলতে গিয়ে 

হো হো হা হা হাসতে থাকে হাসতে থাকে 


সেই হাসিটা আমারও চাই 

কে দেবে গো হাসতে তো দাও ।












*********************************************-************************



 ছোটন গুপ্ত 

ছোটন গুপ্ত নামে কবিতা লেখেন প্রবীর দাশগুপ্ত। পেশায় উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নেশা আর ভালোবাসায় কবিতা। এ পর্যন্ত প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ন'টি ‌। শেষ কাব্যগ্রন্থ মগ্ন সময়ের ইতিকথা। কবিতা ছাড়াও শিশু কিশোর উপযোগী ছড়া লিখতে ভালোবাসেন। নিবাস আসানসোল। কবিতায় সময়কে ধরে রাখতে চান কবি ‌। তাই ধুসর কালের বার্তা ফুটে ওঠে তার লেখনীতে। মানুষের স্বাধীন প্রতিবাদ ধ্বনি লিপিবদ্ধ হয় সুনির্দিষ্ট সমষ্টি চেতনায়। যে কবিতায় সমাজ সময়ের বার্তা অনুপস্থিত সেখানে কবির অনুপস্থিতি। গাছ ফুল পাখি ও সুন্দর তাই কবির কবিতায় তেমন একটা ফোটে না। তবে প্রেম ভালোবাসার ধ্বনি উচ্চারিত হয় বারবার। খেটে খাওয়া মানুষের লড়াইয়ের জন্য কবির কলম জেগে থাকতে চায়।




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন