রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

গল্প * শাশ্বত বোস

 




বই পাড়ার মাটন কারি

শাশ্বত বোস 



“আপনি কি কাউকে খুঁজছেন?” 

মিহি মেয়ে গলার আওয়াজ শুনে পিছন ফিরে তাকাল প্রীতম। এই আওয়াজটাই হয়তো এতক্ষণ ধরে খুব ক্ষীণ ভাবে ওর পথ চেয়েছিল। এর মধ্যে সীতারাম ঘোষ স্ট্রীট আর বেনেটোলা লেনের সঙ্গম স্থল দিয়ে ষাট-সত্তরের একটা হাওয়া উঠে, ঝিম ধরা বিকেলটায় ঠান্ডা নির্জন পিচ পথটাকে কানা গলি ভেবে ভুল করে পথ হারিয়েছে। সম্ভবত কোথাও তার আর ফিরে যাবার নেই। বৃষ্টির শেষ ফোঁটা গুলো পৃথিবীতে ফিরে আসতে চেয়ে ভাঙা পাঁচিলটার কাছে নোটিশ পাঠিয়েছে। গোটা চত্ত্বরটাকে নিষিদ্ধ উপহারের মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে, ঋতিচূর্ণতার ত্রাসে একটা অকিঞ্চিৎকর পাপ বোধে কুঁকড়ে ওর চোখের সামনে দাঁড়িয়েছিল বাড়িটা। বাইরে প্রায় মুছে যাওয়া একটা সাইনবোর্ড ঝুলছে, নাম “কনকলতা বোর্ডিং”। ছাপাখানাগুলো থেকে ভেসে আসা একটা একটানা ঘড়ঘড়ে যন্ত্রের শব্দ, সন্ধ্যাটাকে কেমন যেন নিরর্থক করে তুলেছে। বর্তমানটা ‘ঠিক এক মিলিসেকেন্ড পরেই অতীত হয়ে যাবে’, এমন একটা সময়ে পাড়াটায় ঢুকে পরেছিল প্রীতম। আজ কলেজস্ট্রিট পাড়ায় অতি সুপ্রসিদ্ধ একটি কেবিন স্টাইল রেস্ট্রুরেন্টে ফুড ব্লগিং করতে এসেছিল ও। কিন্তু বিধি বাম! এই রেস্ট্রুরেন্ট কর্তৃপক্ষ খাবারের কোন ছবি বা ভিডিও তুলতে দেন না, কিচেনের তো নয়ই। আসলে আজকালকার ফুড ব্লগাররা খাবার এর নাম করে এসে ভিডিও তুলে ইউটিউবে ফেসবুকে ছেড়ে টু পাইস কামিয়ে নেয়। তাতে দোকানের কাটতি যতটা না বাড়ে তার থেকে হাঙ্গামা হয় বেশী। দোকান জুড়ে প্রায় ব্রিটিশ আমলের সৰ আসবাব, বিশাল বেলজিয়াম গ্লাসের আয়না, মার্বেল টপ বসানো বার্মা টিকের টেবিল-চেয়ার এসব দেখে ‘ফুডি যাপন-চৌকি চাপন’ এর মত সব ব্লগাররা হনু লাফ দেওয়া শুরু করে দেয়। কোনটা ছেড়ে কোনটা তুলি অবস্থা! কোন জিনিসটা বেশী ভিউ আর লাইক দেবে, হাঁসের ডিমের প্রমান সাইজের মোগলাই নাকি সেটা যাতে ভাজা হয়েছে সেই ঐতিহ্যবাহী ছোট্ট তেলচিটে ঘুপচি রান্নাঘরের কালিমাখা সসপ্যানটা! কোনটা বেশী ভাইরাল হবে? অবশ্য এই সব ‘ফুড তড়কা’, ‘দাদা-বৌদি ব্লগ’, ‘হ্যাংলা জুটি-আমের আঁটি’ মার্কা সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেলগুলো, যাদের গা বেয়ে কলেজ স্ট্রিটের রাস্তায় আছড়ে পরে থাকা ট্রামগুলো ঘন্টি মারতে মারতে যুগের অসুখ সারাতে একান্ত ভিজে যাওয়া কোন মন্ত্রহীন আস্যাইলামে ঢুকে যায়। যাবার সময় একবার চেয়ে দেখে ক্যামেরায়, আর একবার খাবার প্লেটে, এগুলো প্রীতমের ফুড ব্লগিংয়ের জ্যঁর নয় কোনোকালেই। আর কোনো নির্দিষ্ট ‘পকেট খালি বুঝলে বনমালী’ মার্কা দিনকালেও এ রাস্তায় ও হাঁটবে না, সেটা মোটামুটি নিজের কাছে ও সিওর। প্রীতম চায় মোটামুটি ভদ্রস্থ একটা খাবার আর তার পেছনে লুকিয়ে থাকা সাতপুরোন ডালপালা ছিটিয়ে থাকা গল্পটাকে তুলে ধরতে। এই কলকাতার পেটের ভেতর ও আবিষ্কার করতে চায় প্রসূতিকালের আরেক কলকাতাকে। এই যে পুরোন খাবারের জায়গাগুলো, যেখানে বাড়ির গেটের গা ডিঙিয়ে আকাশ ফুঁড়ে ওঠা গাছটার ডালপালা বেয়ে মনে হয় গড়িয়ে পড়তে পারে কিছু সুদীর্ঘ্য ও একঘেঁয়ে খামখেয়ালিপনা কিংবা হয়তো প্রবল ঝড় বৃষ্টিতে ওই গাছটাই গেয়ে উঠছে "মালা মালা" বলে কোনো এক উন্মাদ প্রেমিকের ইতিবৃত্ত, শহুরে হৈহল্লার মাঝে চাপা পরে থাকা এই মুহূর্তগুলোকেই খুঁজতে চায় প্রীতম। ‘গল্প’, এই জাগতিক ডামাডোলের মাঝে ওই ছোট্ট জিনিসটাই ওর নূন্যতম চাহিদা। সেটা জায়গার হতে পারে, খাবারের হতে পারে। আবার দিনের শেষে যে মানুষগুলো ভাবতে থাকে গতকালের কথা, হতে পারে প্রীতমের খুঁজতে থাকা গল্পটা আদপে ওই লোকগুলোর মনের ভেতর গুমরে থাকা বিমর্ষতার অসিয়তনামা।


ডাকটা শুনে পেছন ফিরে তাকায় প্রীতম। ময়লা সালোয়ার পরা একটি মেয়ে, বয়স উনিশ কুড়ি বছর হবে। ঢলঢলে দুটো কে সি নাগের অঙ্ক কষা চোখে চেয়ে আছে ওর দিকে। ওই চোখ দুটোই হয়তো, এই গলিটার মোড়ের বিকেলে নিঃসঙ্গ আকাশটায় নিজের খরচ-না-হয়ে-যাওয়া জীবনটাকে, একটা প্রকান্ড ঘুড়ি হয়ে ওড়াতে গিয়ে ভোকাট্টা হয়ে একটা বড় ক্যানভাসে আটকে যেতে দেখেছে বহুবার। দেখতে দেখতে বিরতিহীন দুপুরটায় তড়তড়িয়ে ছাতে উঠতে গিয়ে, সিঁড়ির মুখে ধাক্কা খেয়ে ফিরে এসেছে নিজের জায়গায়। মেয়েটার পুরো মুখটা জুড়ে যেন গোলাপী দুপুর আর নীলচে বিকেল লুকোচুরি খেলছে, যে জিতবে আকাশটার রং সে পাল্টে দেবে। গায়ের ওড়নাটা মেঘবতী ঝর্ণার মত পিঠের দিক থেকে বয়ে গিয়ে, মেয়েটির সদ্য উদ্যাপিত স্তনযুগলকে কাঁঠালিচাঁপার গন্ধে ঢেকে কোমরের দ্রাঘিমারেখার নীচ বরাবর গিয়ে পেঁচিয়ে ধরেছে।

“আপনি কি কাউকে খুঁজছেন?” আবার বলে ওঠে মেয়েটি। পিঠে ব্যাগপ্যাক, হাতে ট্রাইপড আর গো প্রো ক্যামেরা নিয়ে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পরে প্রীতম। আসলে কলেজস্ট্রিট মোর থেকে ব্যর্থ মনোরথ হয়ে ফিরেই যাচ্ছিলো ও। কিন্তু হঠাৎই তীব্র একটা নেচার'স কল! রাস্তার পাশের ফুটপাথ ধরে ‘পে এন্ড ইউস’ খুঁজতে খুঁজতে আপনমনে কিছুটা কৌতূহল বশতই এই বেনেটোলা লেনে ঢুকে পরা। তারপর উদ্বোধনের প্রেস পেরিয়ে গলিটার অপর প্রান্তে যেখানে রাস্তাটা দুভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে, ঠিক সেখান থেকেই একটা মশলা কষার গন্ধ এসে ধাক্কা খায় ওর পায়ে। গোলহীল স্ট্রাইকারের মত সেটাকে পায়ে নিয়ে নাচাতে নাচাতে, কোনদিক থেকে সেটা এসেছে বাম দিক না ডান দিক ভাবতে ভাবতে, বাঁয়ে মোড় নেয় সে। একটা হাতে ঠেলা রিক্সার গা ঘেঁষে আব্বুলিশ খেলতে খেলতে গন্ধটা টুকি দেয়, বোর্ডিংটার গা বেয়ে চুঁইয়ে পরা রোদের ফালিটার পেছন দিকে। পাড়ার লোকগুলো সবাই প্রায় ফুটবল প্রিয় আর মোহনবাগানী। আসার পথে ডান দিকে ডেবে যাওয়া বাড়িগুলো থেকে বেরিয়ে আসা আওয়াজেরা প্রিয় দলটার পাঁচ গোল খাবার জাতীয় শোকে ডুবে আছে তখনও। অতৃপ্ত আত্মার সমবেত ট্রাপিজে চড়ে নটা-পাঁচটার নির্ঘুম জীবনটা দিয়ে পাড়াটার দুঃখে সামিল হলে বোঝা যায়, এতক্ষণ ধরে বিশাল ডানার পাখি হয়ে গন্ধটা উড়ে আসছে, এই বোর্ডিং বাড়িটারই কোন এক নিদ্রাবিলাসী হেঁশেলের জানলার গরাদের ফাঁক দিয়েই। একটা হেঁজিপেঁজি ধোঁয়াটে বিস্তার নিয়ে গন্ধটা অর্ধেক আলো আর অর্ধেক অন্ধকার শরীরে মেখে নিয়ে প্রীতমের নাক বরাবর তর্জনী নির্দেশ করে বাড়িটার দিকে। পায়ে পায়ে বাড়িটার ভেতর ঢুকে পরে প্রীতম। বন্ধ ম্যানহোলের ঢাকনা খোলা একটা অন্ধকার ভ্যাপসা হাওয়া তাকে ঘিরে ঘুরপাক খেতে থাকে। ওর ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য গ্রন্থিগুলো থেকে ততক্ষণে একটা নিঃশব্দ ক্ষরণ শুরু হয়েছে।

“আপনি ইউ টিউবে ফুড ব্লগিং করেন না? আমি আপনের ভিডিও দেখি, খুব ভালো লাগে। বিভিন্ন জায়গার খাবার দাবার নিয়ে আপনি কত কথা বলেন!” মেয়েটির অবচেতনেই তার চোখেমুখে একটা অস্থির গল্প খেলা করে যায়। আশেপাশের কোন বাড়ি থেকে ভেসে আসা টেলিভিশনের শব্দ আর গলির মোড়ের মন্দিরটা থেকে ভেসে আসা ঘন্টাধ্বনির মাঝে, এই এলেবেলে কনভার্সেশনটা ক্রমশ ভালো লাগতে শুরু করে প্রীতমের। ও এবার জিজ্ঞাসা করে, “এই ভাজা মশলার গন্ধটা?”

“ওহ! ওতো ঠাম্মা রাঁধছে, আজ রাতে রেওয়াজী খাসীর ঝোল হবে। বোর্ডিং এর দাদাদের আজ ফিস্ট আছে, সবাই মিলে চাঁদা তুলে পয়সা দিয়েছে, তাই আজ স্পেশাল মিল, মাংস-রুটি। আপনি ভিডিও করবেন আমাদের রান্নার? আসুন না আসুন, আমার সাথে।“

কংক্রিটের স্তুপময় শহরটায় কচ্ছপের গতিতে উড়ে বেড়ানো স্নিগ্ধ সিম্ফনি আর ইন্টারনেটের ঊর্ণজালের সমীকরণে সঠিক ডাটাপ্যাক ঠিক করতে না পারার জটিলতর দ্বিধা-দ্বন্দ্ব-অনুশোচনায় ভোগে অনেক রোদ-বৃষ্টি পেরোনো অমাবস্যা, পূর্ণিমা ঘেরা বাড়িগুলো। সেরকম একটা ধুলোর কুয়াশা ঘেরা সময়ে মেয়েটা ওর ভিডিও দেখে, চ্যানেলটা সাবস্ক্রাইব করে। এরকম হয়ত আরো অনেককেই করে, তবু ব্যাপারটা ভীষণ রকম একটা জাগতিক সমাপতন বলে মনে হয় প্রীতমের কাছে, একটা আগডুম বাগডুম গর্বের কানেকশন এনে দেয় মেয়েটার সাথে। মেয়েটির মনেও কি উঁকি দিচ্ছে কমলা রঙের রোদ? একটা মূক অথচ চেতনাময় চলাফেরা কি শুরু হয়েছে ও তরফেও? হয়তো এসব কিছুই না, মেয়েটির মনে তখন নিতান্ত জাগতিক চাহিদা, এই সুযোগে প্রীতমের চ্যানেলে নিজেদের বোর্ডিংয়ের রান্না বান্নার একটা বিজ্ঞাপন করে নেওয়া। প্রীতম নিজের চ্যানেলের নাম দিয়েছে, “খানা তল্লাশি”। প্রায় ৩৩ হাজার সাবস্ক্রাইবার ওর। তবু প্রোফাইল ইনসাইটের এই অদৃশ্য পারফরমেন্স শো অফের অ্যালগোরিদম এর চক্করে পরে ত্যালত্যাল তুলতুল, ঝরে পড়ছে-খসে পড়ছে-লুফে নাও মাটন কিংবা টুনি দির ২৫ টাকায় চিকেনের পিস এর ভুবনমোহিনী প্রদর্শন নয়। খড়দহ প্লাটফর্মের ২৫ টাকার লেগপিস, চিংড়িহাটার স্মার্ট জিন্স-টপ পরিহিতা উর্বশীদির ভাতের হোটেল এ ব্লগ করতে যাওয়া কিছু বয়ঃসন্ধিকালের ছেলে ছোকরারা অবদমিত কামের বশে উল্টোদিকের দোকানীর শরীরী ভাঁজে যখন মগ্ন মৈনাক, ডিজে অরুণের ডিজিটাল পরোটা,আমেরিকান দাদা-মেক্সিকান বউদি, কাটাপ্পা বিরিয়ানী-বাহুবলী চিকেন চাপ এর মত বিরল প্রতিভাধরদের বিরিয়ানির হাড়িতে মাংস আর আলুর ওপর ঝোল ছড়ানোর কৌশল প্রদর্শনের নিচে যখন চাপা পরে যায় সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মের তাবৎ ইউসার দের বিরক্তি আর কৌতুকের যতিহীন ক্লান্ত ক্যালোরি সচেতনতা, তখন পরিশ্রম আর আদেখলেপনার সূক্ষ্ম বিভাজন রেখাটা হঠাৎ জীবন্ত হয়ে প্রীতম কে টেনে নিয়ে চলে এক অনিবার্য্য ইতিহাসের খোঁজে, ‘খাবারের ইতিহাস’! মেঘের ভিতর থেকে নেমে আসা সন্ধ্যেটার গায়ে সব দোষ, সব আক্ষেপ চাপিয়ে ছায়াচ্ছন্ন পৃথিবীটা যেন মেতে ওঠে, ওর বলা গল্পের আবহমানতায়। যেমন এই মেয়েটি, কিই বা বয়স এর! হয়তো সবে কলেজে ভর্তি হয়েছে, হয়তো বা এই বোর্ডিংয়ে কাজ করে, হয়তো বা ফোন এ নেট ভরে বয়ফ্রেইন্ডের সাথে ভিডিও কল করার জন্য কিংবা হয়তো ওর বাবা মায়ের খোঁজ নেয় দিনের শেষে। হয়তো মেয়েটা ডেটা প্যাক নেয় নেটফ্লিক্স,আমাজন,জী৫ এ ওয়েব সিরিজ দেখবার জন্য কিংবা নিদেনপক্ষে ফেইসবুক করার জন্য তবু তো প্রীতমের ভিডিওগুলো দেখে ও! এইটুকু বয়সের একটা মেয়ের জ্ঞানপিপাসা কে মনে মনে কুর্নিশ না জানিয়ে পারেনা প্রীতম। 


এরকম হয়তো অনেকেই প্রীতমের ফুড ব্লগিংয়ের স্টাইলটাকে পছন্দ করেন। যারা খাবার ভালোবাসেন, ভালোবাসেন খাবারের পেছনের পাতা ঝরা কলকাতার ইতিহাসগুলোকে। এই যেমন ১৮৫৬ খ্রীষ্টাব্দে তৎকালীন ভারতের গভর্নর জেনারেল চার্লস ক্যানিংয়ের হাত ধরে তাঁর স্ত্রী লেডি ক্যানিংয়ের ভারত সফরের সময় শুধু ফার্স্ট লেডির ফরমায়েশ মতো অভূতপূর্ব ও বিশেষ রকমের ঘিয়ে ভাজা ছানার মিষ্টি বানাতে জনাইয়ের ‘ভীম চন্দ্র নাগ’ এর হাত ধরে জন্ম নিলো লেডি কেনি। অথচ তার আগে অবধি বাংলার বুকে ছানা ছিল নিতান্ত বর্জিত বস্তু! তা সে যতই যুবক নবীন চন্দ্র রসে ভেজা তুলতুলে স্পঞ্জ রসগোল্লা তৈরীর চেষ্টা করুন না কেন মিষ্টি হিসেবে মূলত ক্ষীরের মিষ্টিকেই চিনতেন বাংলার মানুষ। কারণ ক্ষীর চট করে খারাপ হয়ে যায় না, থাকে বহুদিন। মূলত চিনির প্যারা, গুড়ের নাড়ু আর পায়েসই পরিবেশিত হতো উৎসব অনুষ্ঠানে বাঙালির পাতে। Cosmopoliton কালচারের সাম্যবাদী মননশীলতায় খাবার পাতে যুগের চার্বাকে, পরিবর্তনের প্রবণতা বাঙালী বহন করেছে চিরকালই। শুধুমাত্র এই দোকানটির মিষ্টির গুণমানে মুগ্ধ হয়ে লন্ডনের বিখ্যাত ঘড়িপ্রস্তুতকারী সংস্থা ‘কুক এন্ড কেল্ভী’ এর কর্ণধার তাঁর সম্মানে একটি বাংলা ডায়ালের ঘড়ি নির্মাণ করে দিয়েছিলেন। গোটা কলকাতায় এরকম ঘড়ি হয়তো এই একটিই আছে। আবার এই যে আজকের ‘ডেকার্স লেন’, মধ্যবিত্ত অফিস পাড়ার বাঙালীর টিফিন বা মধ্যাহ্নভোজের স্বর্গরাজ্য, পি থাঙ্কাপ্পন নায়ার তার বই ‘এ হিস্ট্রি অফ ক্যালকাটাস স্ট্রিটস’-এ লিখেছেন, ১৭৫৬ খ্রীষ্টাব্দে ‘ফিলিপ মিলনার ডেকার্স’ নামে জনৈক তরুণ ইংরেজ কলকাতায় আসেন ও অ্যাসিস্ট্যান্ট ইম্পোর্ট ওয়্যারহাউস কিপার এর পোস্টে নিযুক্ত হন। পরে ১৭৭৩ থেকে ৭৪ সাল অবধি তিনি কলকাতার কালেক্টর পদে নিযুক্ত ছিলেন। দেশে ফিরে যাবার আগে প্রায় ২৪ কাঠা জমি যুক্ত একটি প্রাসাদোপম বাড়ি জনৈক ফেলো ইংলিশম্যান হেনরি স্কটকে বিক্রয় করেন, যা আজও দাঁড়িয়ে আছে ডেকার্স লেনের গা ঘেঁষে। আজকের ডেকার্স লেনের একটি অংশ তাঁর প্রাইভেট প্রপার্টি ছিল। ১৯৪০ এর দশক থেকে অফিস পাড়া লাগোয়া জায়গাটিতে মূলতঃ ছাত্র ও অফিস যাত্রীদের লক্ষ্য করে সাশ্রয়ী মূল্যের ভাত, টোস্ট, ফ্রাই সহ বিভিন্ন ইন্দো-ইউরোপিয়ান খাদ্যের পশরা সাজিয়ে গজিয়ে ওঠে একটার পর একটা দোকান। এর মধ্যে সবচাইতে জনপ্রিয় আজকের ‘চিত্তদার দোকান’। সেই জায়গাটাকে আজকে সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সারদের সৌজন্যে লোকে জানে ‘জয় মা কালী অরুন দা’র জন্য। এই যে চাল চুরি,চাকরি চুরির সন্ধিহীন মুক্তরাজ্যে বেকার বাঙালি যুবক যুবতীদের খাবারের ব্যবসা করে স্বনির্ভর হবার প্রচেষ্টা, সেটার শুরু কিন্তু বিখ্যাত নকুরের সন্দেশের সময় থেকেই।  ১৮৪৪ এ ‘হেনরি হার্ডিচ’ যখন দেশের বড়লাটের আসনে, তখন চাকরির বাজারে আকাল বুঝে ‘মহেশ চন্দ্র দে’ নামের এক বাঙালি যুবক সিমলাপাড়ায় মিষ্টির দোকান দেন। তাঁর ছেলে ‘গিরিশ চন্দ্র দে’র মেয়ের বিয়ে হয় জনাই থেকে আসা ‘নকুড় চন্দ্র নন্দী’র সাথে। ‘রামদুলাল সরকার’ স্ট্রিটের বর্তমান ‘গিরিশ চন্দ্র দে-নকুর চন্দ্র নন্দী’র এই দোকান থেকেই পারিজাত পরিবেশিত হয়েছে ‘ঐশ্বর্য্য রাই’ এর বিবাহ অনুষ্ঠানে। এই দোকানের কাঁচাগোল্লা ভালোবাসতেন স্বয়ং ‘হিলারি ক্লিনটন’, গোলাপি প্যাড়া প্রিয় ছিল প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ‘শ্রী রাজীব গান্ধী’র। আবার বাঙালির স্বপ্নপুরুষ মহানায়ক উত্তম কুমারের ভবানীপুরের বাড়ির লক্ষ্মীপুজোয় মিষ্টি যেত এই দোকান থেকেই। খাবারের বাজারে এই উদ্যোগপতি বাঙালির, ছেঁড়া কাঁথা থেকে লক্ষ টাকায় ওঠা বাঙালির কবিতাময় ইতিহাসগুলো কিন্তু লুকিয়ে আছে এই গল্পগুলোতেই। ঠিক এরকমই উদ্বৃত্ত ধরণের গল্প আছে শ্যামবাজারের গৌরীমাতা লেনের ‘বড়ুয়া এন্ড দে’ এর মাটন প্যান্থেরাস কিংবা সেন্ট্রাল এভিনিউ স্থিত ‘নিরঞ্জন আগার’ এর হাঁসের ডিমের ডেভিল এবং ‘মিত্র ক্যাফে’র ব্রেন চপ এরও| নিম্নরুচির স্বল্পমেয়াদী জীবনপ্রদর্শন আর নন মেটেরিয়াল জটিল সামাজিক সংকীর্ণতার পপুলারিটি রেসে আটকে পরে ভীষণ রকমের একটা হাঁসফাঁস নাব্যতা সংকটে ভুগতে থাকে গল্পগুলো।


বাড়িটার বাইরের দক্ষিণ দিকের দেওয়ালে ঝুলতে থাকা ডিশ এন্টেনাটার ধর আর মুণ্ডুর মাঝের শূন্যতায় ভেসে আসা মশলা কষার গন্ধটাকে সঙ্গী করে, মেয়েটির পিছুপিছু কলতলাটা পেরিয়ে একটা স্যাঁতস্যাঁতে গোলার্ধে এসে হাজির হয় প্রীতম। ঝাঁ চকচকে শপিং মল, UPI পেমেন্ট এবং মাল্টিপ্লেক্স বা হাউসিং কমপ্লেক্স সম্বলিত কলকাতার ভরকেন্দ্র সেজে, নিশ্চুপ, নির্ভার নির্জনতার প্রতীক হয়ে, খুবলে খাওয়া সন্ধ্যেবেলাটায় অস্বাভাবিক রঙের ফ্যাটফ্যাটে ফণা তুলে, এককোণে দাঁড়িয়ে আছে উপরে উঠে যাবার সিঁড়িটা। বিশাল বড় ঘরটার এককোণে একটা টুল পেতে বসে খাসির মাংসে দই, আদা বাটা, লঙ্কা বাটা, পিয়াঁজ-রসুন বাটা দিয়ে চটকে মাখাচ্ছেন এক বৃদ্ধা, বয়স প্রায় আশি ছুঁই ছুঁই, চোখ ঘোলাটে। মেয়েটি বলে ওঠে, “ঠাকুমা ওই দেখো কে এসেছেন! ইনি ইউ টিউবে রান্নার ভিডিও করে, আজ তোমার রান্নার ভিডিও করবে। রাস্তার মোর থেকে তোমার রান্নার গন্ধ শুঁকেই চলে এসেছে।“ বৃদ্ধা কথাগুলো শুনে একবার মুখ তুলে তাকালেন শুধু। মুখ তার তারার আলোর মত অকম্প, স্থির। ঘরের কোনে দাঁড় করানো পুরোনো দিনের স্ট্যান্ড পাখার কর্কশ আওয়াজটা এখন শ্লেষ্মামিশ্রিত সুরেলা কম্পাঙ্কের মত শোনায় প্রীতমের কানে। কিন্তু এটা চললে ভিডিও হবে কিভাবে? প্রীতম ঠিক করে রান্নাটার ভিডিও টা শুট করে নেবে, পরে এর ওপর একটা ভয়েস ওভার চাপিয়ে দেবে, তাতে জুড়ে দেবে এই বাড়িটা, এই পাড়াটার ইতিহাস সম্পর্কে দু এক কথা। বৃদ্ধা মেয়েটিকে ইশারায় মশলার পাত্রটা এগিয়ে দিতে বলেন। মুখে তার দোক্তা পাতা পোরা, কুঁচকে ছোট হয়ে যাওয়া ঠোঁটের কোণ বেয়ে থুতু আর কষ গড়িয়ে পরছে। মশলার পাত্রটাকে ভালোভাবে খেয়াল করে প্রীতম। একটা ছোট বারকোষের উপর সার দিয়ে হলুদ, চিনি, গোটা ধোনে, জিরে বাটা, কাঁচা লঙ্কা বাটা সব সাজানো। মশলার ধরণ দেখে প্রীতম বুঝতে পারে সব কটা মশলাই শিল-নোড়ায় হাতে বাটা। ক্যামেরাটা ঝটপট অন করে ও। বিশাল বড় গ্যাসের ওভেনে বিশাল লোহার কড়াই তে এতক্ষন সর্ষের তেলে তেজপাতা, লঙ্কা, এলাচ, দারচিনি আর একটু চিনি ফোড়ন দিয়ে কষানো হচ্ছিলো। রাস্তা থেকে এই গন্ধই পাওয়া যাচ্ছিলো তাহলে! বৃদ্ধা এবার কড়াইতে গোল করে কাটা পিঁয়াজ ছেড়ে ভাজতে থাকেন। তারপর ধীরে ধীরে বাকি সব মশলা দিয়ে কষাতে থাকেন ভালো করে। ঠিক এমনিভাবে মাংস রাঁধতেন প্রীতমের মা। ওর মা বলতেন বাঙালরা আগেভাগে মাংস ম্যারিনেট করে রাখে, এতে মাংসের সাথে মশলা ভালোভাবে মিশে গিয়ে প্রতিটা ফাইবারের খাঁজে খাঁজে ঢুকে যায়। মাংস নরম করার জন্য ওর মা খাসির মাংসের সাথে কিছুটা কাঁচা পেঁপে বাটা মিশিয়ে দিতেন। মায়ের সাথে কাটানো রান্নাঘরের সেই দুপরগুলোরও একটা জীবন্ত গল্প আছে। সেই গল্পটা ওর মা আর তাঁর হাতে তৈরী স্পেশাল একটা মশলার গল্প। রান্নাটার নাম দিয়েছিল ওরা ‘বইপাড়ার মাটন কারি’। প্রীতমের মেজকা এই বেনেটোলা লেনেই একটা প্রেসে চাকরী করতেন। কোনো একদিন হয়তো সেই প্রেসের ক্যান্টিনেই খেয়েছিলেন মাংসের ঝোলটা। ক্যান্টিনের ঠাকুরটাকে হাত করে রেসিপিটা জেনে এসে তাঁর সাধের বড় বৌদিকে শিখিয়ে দিয়েছিলেন। গোল গোল করে আলু দিয়ে মাংসের লাল লাল ঝোল। 

ম্যারিনেট করা মাংস টা দিয়ে ভালো করে কষানোর পর এবার কড়ায় এক ঘটি জল ঢেলে দিলেন ঠাকুমা। প্রীতমের মা দিতেন একটা বাটিতে করে গোলা রতনজোট। সব শেষে ঝোল যখন টগবগ করে ফুটছে, তখন ওপর থেকে একটা ভাজা মশলা ছড়িয়ে দিলেন ঠাকুমা। রান্নাঘরের ঘুলঘুলি দিয়ে ঘরে ঢোকা বিভ্রান্তিকর ধূলিকণা আর টাকডুমাডুমের সাথে মিশে মাংসের ঝোলটা যেন কড়াময় দোল খেতে থাকে। প্রীতমের দুটো চোখ জুড়ে পেয়ে বসে একটা হিম হিম ভাব। ওর মনে পরে যায় ওর মা ও এই মশলাটা ব্যবহার করতেন। মশলাটায় ধনে-এলাচ-লবঙ্গ আর দারচিনির সাথে জায়ফল জয়িত্রী ইত্যাদি গরম মশলা ভাজার একটা সংবেদনশীল, ক্লান্তিহীন, মেদবহুল দীর্ঘ্য কবিতা মিশে থাকতো সব সময়।


রান্নাটা হয়ে গেলে প্রীতম মেয়েটির একটা বাইট নিয়েছিল আলাদা করে। মেয়েটির নাম ‘কুসুম’, ভালো নাম ‘প্রিয়াংশী দাস’। এই বোর্ডিংটা ওদেরই শরিকি বাড়ি। খুব ছোটবেলাতেই মা বাবাকে হারিয়েছে ও। এখন ঠাকুমার সাথে মিলে বোর্ডিংটা চালায়। মাথার উপর অবশ্য লোকাল কাউন্সিলর ও অন্যান্য গণ্যমান্য দের হাত আছে। দুবেলা ঠাকুমার সাথে মিলে রান্না করা, বোর্ডিংয়ের বিভিন্ন বোর্ডার দের সুবিধা অসুবিধার কথা শোনা অফিসে বসে, মাসের শেষে হিসেবে করে টাকা বুঝে নেওয়া, সাথে স্থানীয় চিত্তরঞ্জন কলেজে বাংলা অনার্স নিয়ে পড়াশুনা, সদ্য কিশোরী নিম্নবিত্ত জীবনে এটাই ওর যতিহীন মানচিত্র। এই বোর্ডিং বাড়িটার পাশেই প্রভু রাধামাধব ও গোপীরাণী জিউয়ের নাটমন্দির। মনোহর প্রিকাস্ট আয়রনের খিলান, থাম ও অঙ্গসজ্জার জন্য যেটি কলিকাতা কর্পোরেশন ও হেরিটেজ কমিশনের পক্ষ থেকে হেরিটেজ গ্রেড ১ এর তকমা পেয়েছে, তার প্রতিষ্ঠাতা ‘ঈশ্বর পিয়ারীমোহন দাস’ ছিলেন ওরই পূর্বপুরুষ। এ পাড়ার আরো অনেকগুলো বাড়ি, যাদের ছাতে বৃষ্টি এসে লেগে দুভাগে ভাগ হয়ে যায় রামধনু রং রোদে, তাদের বয়সের একটা আনুমানিক আন্দাজ করা যায় ওই চলন্তিকা রোদটায় নিজের হাত মেলে ধরলে। এগুলো বেশীরভাগই ওদের জ্ঞাতিদের ছিল একসময়। হাতে টানা রিক্সা, ফুটবল সমর্থক, তিনকড়ি হালদার লেনের মুখে হাঁ হয়ে থাকা ম্যানহোলটা, এদের সবাইকে ‘এক্ষুনি আকাশ চুড়ো থেকে ছুটে আসা একটা তীর গড়িয়ে পরবে পায়ের পাতার সামনে’ এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে, দুহাতে রোয়াক জড়িয়ে শুয়ে থাকা গলিটা আজ সম্পূর্ণ পরিত্রাণহীন।

তবে এই আপাদমস্তক ঘটি পাড়ায় ওর ঠাকুমা হলেন প্রায় একমাত্র বাঙাল। ঠিক যেমন প্রীতমের মা ছিলেন সবুজ মেরুন তাঁবুতে একটুকরো লাল হলুদ ভিটে। ছোট্ট পিতলের বাটিতে এক পিস মাংস টেস্ট করেছিল প্রীতম। ঝোলটার প্রতি চুমুকে ওর মায়ের কথা মনে পরছিল। আজ তিন বছর হয়ে গেলো মা নেই, শুধু মনের অন্দরে জমা হয়ে আছে উজাড় শস্যক্ষেত, এক জীবন মৃত ঘাস আর গুল্মলতা। আসার সময়ে ঠাকুমাকে একটা প্রণাম করে একটা ছবি তুলে নিয়েছিল প্রীতম ওর SLR এ, সাথে কুসুমেরও। মেয়েটার চোখ চাপা হাসি জুড়ে, উছলে পরা একটা অদ্ভুত ঘুম ঘুম ভালোলাগা আছে। সেটাকে নতুন আলু আর পুরোনো কাগের ডিম বগের ডিমের মত ঝেড়েঝুড়ে রাখতে জানে প্রীতম। অমলতাসের ফাঁক দিয়ে আসা বিন্দু বিন্দু আলো গায়ে মেখে, কয়েক ঘর বোর্ডার তখন ঘরে ফিরতে শুরু করেছে সবে। মেঘ করে আসছে, এই মেঘের সাথেই হয়তো গলিটার উপর দিয়ে কেটে যাবে কত অনামী শনিবার রবিবার। ওদের ডানায় ভর করে প্রীতম আবার আসবে ‘কনকলতা বোর্ডিং’এ, কুসুমকে কথা দিয়েছে ও। সেদিন আরো অনেক কথা হবে, খাওয়া হবে। আজ যে কথা হলো, যে কথাগুলো বাকি রয়ে গেলো, ফেসবুক-হোয়াটস্যাপ এর সীমানা পেরিয়ে এই গলিটা সব জানে। শুধু কাকে ভালোবাসা দেবে আর কাকে মোহ-মায়া, বুঝতে পারেনা। সন্ধ্যের রেডিওতে তখন FM বাজছে, “আরো একটা ছেলে মেয়ের বয়স বেড়ে যাবে, আরো একটা দিনের অবসান।“ না, এই দুটো ছেলেমেয়েকে চির তরুণ রেখে নিজের ভাষায় চুপ থাকতে থাকতে, গলিটাই হয়তো বুড়ো হয়ে যাবে। 


হয়তো আজ এডিটিং টেবিলে বসে, রাতের গায়ে গা ঘষে, তীব্র রুটির গন্ধে ভিডিও ফুটেজ গুলোকে জুড়তে জুড়তে, উপসংহারহীন একটা ইন্ট্রো দেবে প্রীতম, “নমস্কার আমি আপনাদের প্রীতম আর আপনারা দেখছেন আপনাদের চ্যানেল খানা তল্লাশী। আজ আমি আপনাদের একটা একেবারে নিজস্ব প্রায় অলৌকিক রূপকথা শোনাবো যেখানে রাজপুত্র আছে রাজকন্যা আছে আর আছে ভার্চুয়াল ইন্টারাকশনে ঢিমে আঁচে কষানো একটা মাটন কারি, অনেকগুলো লাভ ইমোজি আর স্যাড রিঅ্যাকশন এর সাংকেতিক অনুভূতি বুকে নিয়ে।“












***************************************************************************************




শাশ্বত বোস


লেখকের জন্ম ১৯৮৯ সালের জানুয়ারী মাসে পশ্চিমবঙ্গের  হুগলী জেলার শ্রীরামপুর শহরে । হুগলী জেলারই রিষড়া শহরে শ্রীরামকৃষ্ণ আশ্রম বিদ্যালয় থেকে স্টার মার্কস নিয়ে যথাক্রমে ২০০৫ ও ২০০৭ সালে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন । ছোটবেলা থেকেই তিনি লেখালেখির সাথে যুক্ত। বিভিন্ন নামী পত্রিকা যেমন সন্দেশ, জোয়ার, কোরক, পথ ও পাঁচালি ইত্যাদি পরিবারের তিনি নিয়মিত সদস্য ছিলেন । বহু স্বনামধন্য লেখক-লেখিকাদের সাথে তিনি বিভিন্ন পত্রিকার শারদসংখ্যায় লেখালিখি করতেন । 

পরবর্তীকালে উচ্চশিক্ষা ও কেরিয়ারের জন্য সাময়িকভাবে সাহিত্যচর্চার জগৎ থেকে বিরতি নিয়েছিলেন । ২০১১  সালে ইলেকট্রনিক্স এন্ড কমিউনিকেশন  ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক হবার পর একজন সফল আউটডোর ব্রডকাস্টিং ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে একটি খ্যাতনামা বাংলা স্যাটেলাইট চ্যানেলে যোগ দেন ও পরবর্তীতে তিনি ইন্ডিয়ান নেভি ডেপুটেশনেও কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি একটি নামি বহুজাতিক সংস্থায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কর্মরত । বর্তমানে তিনি পুনরায় সাহিত্যর্চচার জগতে প্রবেশ করেছেন। তার বিভিন্ন লেখালিখির মধ্যে উল্লেখযোগ্য রচনা “অনন্ত বিকেলের রূপকথারা” , “বৈশালী_পাড়ার_প্রতিমা রা”,  “অতঃপর অশুচি বনেদিয়ানা, পুজোর বনসাই এবং .....” ,  "কান্না রাগের 'হোমা পাখি'"  , “ডরাইয়া মরে”, “রূপান্তরের পথে”, “প্রবাসের বিভীষিকা”, “বইমেলা ও একটি গোলাপ”, “পুরোনো মর্গটার কাছে”, এবং “পিশাচসিদ্ধ”, যা একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে লিখিত এবং ইতিমধ্যেই ইউ টিউবে অডিও স্টোরি হিসেবে সাড়া ফেলে দিয়েছে। এছাড়া ভ্রমণকাহিনীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য  “পরবাসী টুসুর দেশে”||
তার লিখিত কবিতাগুলির মধ্যে “একটি ব্যর্থ প্রেমের ক্ষুব্ধ আখ্যান”, “উদ্বর্তিনী”,   “প্রাণের পুজো”, “কালো মেয়ের উপাখ্যান”,  “বাংলা ভাষার দেশ”, “অন্য বসন্ত”, “ ভালোবাসা ও একটি বসন্ত”, “ মন- শরীরী”,  “হে নজরুল”  ,  “সমর শেষের অসিয়ৎনামা”  উল্লেখযোগ্য ও জনপ্রিয়||
এই স্বল্প কালেই বহু সংস্থা থেকে তিনি সেরার সেরা সম্মানে ভূষিত | এর মধ্যে “অচেনা পর্বত” সম্মান, রাজার কবিতা studio কর্তৃক প্রদত্ত “অয়ন সৃজন সম্মান” প্রণিধানযোগ্য|


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন