প্রশান্ত মন্ডল * তিনটি কবিতা
রাঙা শৈশব
তখন আমাদের ব্যাট একটাই
আর বলও তাই।
তেমনি দল বলতে ঐ গোনা চার-পাঁচজন
আমরা সারা বিকেল ধরে খেলতাম
এবং প্রত্যেকেই প্রত্যেকের জায়গাটা ধরে রাখতাম
আমাদের নির্দিষ্ট কোনও জার্সির ছিল না।
আমাদের বন্ধুও ছিল এক, আর শত্রুও ঐ
দিনশেষে পরস্পর গলায় হাত দিয়ে নিজেদের বাড়ি ফিরতাম
কোনও একদিন ঐ চিরচেনা ব্যাট-বলটা হারিয়ে গেলে
আমাদের বন্ধুত্বের হরতাল ঘোষণা হত
কিন্তু হৃদয়ে হৃদয়ে থেকে যেত একই আবেগ আর রক্তের রঙ...
পরিবার
প্রত্যেকেই হেঁটে চলেছি নিজের নিজের গতিপথে
সেই চিরচেনা নদীটার পাড় ঘেঁষে
আমাদের গন্তব্যটা তবু আলাদা হয়ে গ্যাছে
আমাদের একদিন মুখোমুখি হওয়ার কথা ছিল
ডাইনিং টেবিল জুড়ে শৈশব তাজা করার কথা ছিল
যেভাবে পায়রার দলগুলো বকম বকম করে
একসঙ্গে খুঁটে খায় শস্যদানা
তবু আমাদের এক হওয়া হল না
এই যে একা একা হেঁটে চলার অভ্যাসে
অচেনা একটা রোদ মাঝখানে ঢুকে
পুড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছে পরস্পরের উলঙ্গ শরীর।
বৈঠক
কতকগুলো দাঁড়কাক বৈঠকে বসেছে
ওদের আলোচিত বিষয় কাওয়াড়িখানা এবং অন্যান্য
ওদের মাঝে একজন সভাপতিও আছেন
যার চঞ্চু অন্যান্যদের তুলনায় মোটা আর সুদীর্ঘ
তাঁর বক্তব্য, 'স্বচ্ছ ভারত এর কাজ শুরু হয়ে গেছে
আমাদের প্রত্যেকেরই সংকল্প অনুযায়ী কাজ করে যেতে হবে।
তবেই আমরা জাতীয় কাক বলে বিবেচিত হব...'
এই যে কাকেদের সমারোহ
এই যে একতার জন্য লড়াই। স্বচ্ছতার জন্য লড়াই..
তা আমাদের অসুস্থ পৃথিবীর আত্ম উপলব্ধি হবে কবে!
*******************************************************************
পিতা- লক্ষীকান্ত মন্ডল ও মাতা- কিরণবালা মন্ডল। ভারত, পশ্চিমবঙ্গ তথা শিলিগুড়ি শহরের একটি ছোট্ট গ্রাম অম্বিকানগরে জন্মগ্রহণ এবং স্থায়ী বাসস্থান। জন্মের কিছুকাল পরই মাতৃবিয়োগ ঘটে এবং ধীরে ধীরে অভাব-অন্টনের মধ্যে এগিয়ে চলার পথ তথা জীবন-বৃত্তান্ত। লেখার আগ্রহ তথা গুণী ও শ্রদ্ধেয় মানবদের জীবনী পড়বার ঝোঁক শৈশব থেকেই। প্রথম লেখার হাতেখড়ি বিদ্যালয় জীবনে এক তরুণ কবি তথা স্কুল শিক্ষককে দেখে। প্রথম আত্মপ্রকাশ "মুখচ্ছদ্ম" নামক আঞ্চলিক পত্রিকার দ্বারা। এরপর "শুকতারা" পত্রিকায় কবিতা প্রকাশ। ধীরে ধীরে সময়ের হাত ধরে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, যৌথ সংকলন, ই-সংকলন, ই-ম্যাগাজিন এ লেখা প্রকাশ। লেখালেখি ছাড়াও পাশাপাশি চলতে থাকে শিল্প-কর্ম, সঙ্গীত চর্চা, নাটক-থিয়েটার, অভিনয় চর্চা এবং সমাজসেবামূলক কার্যকলাপও চলতে থাকে সুযোগ পেলে। আর এই পরিমিত জীবনের যা কিছু দেনা-পাওনার গল্প তা স্বর্গীয় পিতা-মাতার প্রতিই উৎসর্গিত।






কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন