কবিতাগুচ্ছ * তপন পাত্র
চাষবাস
১.
পথ আটকে দেবার মতো রোদ।
ঝাঁট দেবার আগে জলের তড়তড়া দেওয়া বৃষ্টিতেই
লাঙ্গল নেমেছিল মাঠে।
অবশিষ্ট যেটুকু বীজধান ছিল মাটির হাঁড়িতে ,
মাটিতে ছড়ানো হলো।
স্বপ্নময় ধানের বীজগুলি অঙ্কুরের ডানা মেলতে ভয় পাচ্ছে।
(২)
শ্রাবণ পেরিয়ে যায়
কতবার ভোরভোর পেরিয়ে গেল 'ভোলে বাবা পার করেগা'-র দল
এবার কাউকে ভিজতে ভিজতে জল ঢালতে হয়নি শিবলিঙ্গের গায়
বাবাধাম,তারকেশ্বরের কথা জানি না
আমাদের বুধপুর, ভগড়ায় যে সমস্ত ভক্তরা জল ঢাললো
ওরা যদি লিঙ্গের মাথায় না ঢেলে আমাদের জমির এক কোনে ঢেলে দিত
চাষ হতো এক বিঘা ধান ।
আমাদের ক্ষেতের কোণ কোনে পাতকুয়া নেই ইঁদারাও নেই
শিবের মাথায় গঙ্গা
শিরে কালফণী ।
(৩)
গুড়া গুড়া জমিগুলান কুরোল বাইয়ে
গরুর সঙ্গে গরু হইয়ে ডাগর ডাগর চাষ জমি করেছিল হলধর।
সারা লিরন
ই বাঁধ সি বাঁধ থেকে পাঁক চালিয়ে মাটি তৈরি করেছিল।
কিন্তু মনের আশা মনেই রইল।
ই কেমন শরাবন ব ----
আসমানল্যা বুঁদা না ঝরিল।
চোখের জলে দুখের আরাম হয়, চোখের জলে ত আর ক্ষেতের মাটি ভিজব্যাক নাই।
(৪)
ধান হবেক নাই ত বিরি ছড়াই দে
শুকনা মাটি ত অল্পস্বল্প জলে মাঝে মাঝে ভিজছেই।
পিঁদাড় কোলল্যা যত বিরি বাড়ি মু'শনাবাড়ি আছে হাল বাঁইয়ে বিরি ছড়াই দে।
গুষ্টির টাঁক
চাল সিঝা না হ'লে কি শুধু বিরির ঝোলেই খাবি?
মূলে মাগ নাই ফুলশয্যা!
(৫)
চাস নাই বাস টুরুই ব্যাঙের আশ
শরাবণের তিন হপ্তা পেরাই গেল ব্যাঙের গলা ফা'টল নাই
একটা বর্ষা কাঁটাও প'ড়ল নাই মাঠে
সারা আকাশ জুড়ে মেঘ আর মেঘ
বৃষ্টি না নামলে মানুষের কী করার আছে বল্অ?
ভাত ফুলের ধুঁয়া উঠলে মনমুরগি লাচে,
ই বছর আর লা'চবেক নাই।
(৬)
চারা-তলা সকল ম'ল্ল
পাঁচাআঁটি ক'রতে হ'ল নাই
গরুগিলার গা গতর শিরশিরা'ছে,
আচ্ছা ক'রে বঁটাটি টিপার জন্য লিসপিস ক'রছে আমার হাতের মুঠি।
যুয়ান মাটি লাঙ্গল চাইছে ...
সব বাঁজা হঁইয়ে গেল হে!
বছরের পর বছর আবাদ নাই।
দে ---
বা'দ-কানালী,বহাল,টাঁ'ড় চাদ্দিকে শুধু গাছ লাগাই দে
গাছে গাছে ভ'রে যাক ক্ষেত খামার সব।
এ নুনুর মাই,
বেলা যে পড়ে আ'ল ল
জলকে চল।
(৭)
বিরাম টুডু টাঁড়-টিকরে শুধু পাট বুনে ছিল
জনহার বাড়ির ভিতর ভিতরেও পাট
বাজরা ক্ষেতের মাঝে মাঝেও পাট
ধান যখন হবেক নাই ,
কে কচ্ছে ধানের মায়া ...
পাটের ছাল ছাড়াই ঢেরা পাকাই দড়ি
বাবুদের খা'ট ছাওয়া হব্যাক।
আর ---
ডবার জলে পঁচতে দিলেই শন।
হাটে হাটে শন বিকে কিনে আ'নব চাল,
কুথায় পাব চাল ?
আকাল আকাল ...
বিরাম টুডুর পেটের খিদা বিরাম মানে নাই!
(৮)
মকর পরব হ'ল বাঁসি,
ভে"তা খাটা বাজে আসি
পাঁচ মন ধান দিল পে"ন্দা সেরে
ইবার আর লয় নুনহি,
লাক টাকা দিব ব'ললেও গ'তে রইব নাই।
চাল সিজা দিব বলে
আমানি, পোড়া মুড়ি
সুয়াং ফু'টে গেল,
সম্বচ্ছরের লুঙ্গি-গামছা তিন মাস কেটে নাই।
গপনে গপনে চ'খের লর গড়াঁই পায়ে ঝরে,
পর কি আর লিজের মতন করে নুনহি, পর কি আর লিজের মতন করে!
(৯)
ঘরের পিঁদাড় কোলে একটু আধটু সবজি চাষের জন্য যে বাড়িটা ছিল,
কুল, বাবলা, এ্যঁ"কড়া গাছে ভরে গেল।
ছাইরা হ'তেই আর শাগ,বেগুন, শিম,ঝিঙা ফলে নাই।
গাছ তলে তলে আগড়া তুষ ছ'ড়াই দিয়ে
লাগাই দিলম আলতি-মান-কচু-হলুদ- আদা
কত খাবি খা ---
দেশ গুনে বেশ বঁধু
ভাঁউরে ফসল।
(১০)
বাড়ি নামর গুড়া গুলাতেও চাষ হ'ল নাই।
আদ ভিজা ক্ষেতেই লাঙ্গল দিয়ে লাহেড়
আর
ধারে ধারে আমড়ুর বীজ ছ'ড়াই দিলম।
লাহেড় হব্যাকেই।
বিরি বাড়িতে বিরি।
লাহেড় সিজা মুড়ির বড় সুয়াদ বিহাই।
ভাত জুটলেই বিরির ঝোল
ছোট বউটা পুয়াতি,
কন্ সময় বাড়িধারে যাঁইয়ে ইদিক-উদিক চাঁইয়ে এক খঁচল তুলে আনব্যাক লাল আমড়ু।
লাল ঝরে পড়ে।
***************************************************************************


কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন