সোমবার, ২ অক্টোবর, ২০২৩

অনুবাদ কবিতা * রুমা ঢ্যাং অধিকারী





অক্টাভিও পাজ

 

অক্টাভিও পাজ জন্মগ্রহণ করেন ৩১ মার্চ, ১৯১৪ সালে এবং মৃত্যু ১৯ এপ্রিল, ১৯৯৮ সালে। তিনি ছিলেন মেক্সিকান কবি, লেখক এবং কূটনীতিক, যিনি ২০ শতকের অন্যতম প্রধান লাতিন আমেরিকান লেখক হিসাবে স্বীকৃত। তিনি ১৯৯০ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। ১৯৪৫ সালে মেক্সিকোর কূটনৈতিক কর্পসে প্রবেশ করেন এবং ১৯৬২ থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত ভারতে মেক্সিকোর রাষ্ট্রদূত হিসেবে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ সমাধা করেন। ভারতে থাকাকালীন পাজ হাংরি জেনারেশনের সাথে পরিচিত হন এবং তাদের ৩৫ মাসের বিচারাধীন সময়ে নানাভাবে সাহায্য করেন। ১৯৫৭ তাঁর লেখা দীর্ঘকবিতা 'পিয়েরদা দি সল' এর মাধ্যমে তিনি প্রসিদ্ধলাভ করেন। কবি রুমা ঢ্যাং অধিকারীর অনুবাদে এখানে আমরা পড়ছি, অক্টাভিও পাজ-এর দুটি কবিতা----- 



১.   

আসা ও যাওয়ার মাঝে


থাকা ও যাওয়ার মাঝে

দোল খায় দিন,

নিজের স্বচ্ছতার ভালোবাসায়।

বর্তুলাকার দুপুর এখন এমন একটি উপসাগর

বিশ্বজগৎটি যেখানে থেমে শান্ত পাথরের খাঁজে খাঁজে।


সবই দৃশ্যমান এবং ছলনাময়

সবকিছু সামনে অথচ অস্পর্শনীয়। 


খাতা, বই, গ্লাস, পেনসিল

নামের ছায়ার ভেতর তারা বিশ্রামে।


সময় ধকধক করে আমার মন্দিরে

পুনরাবৃত্তিতে সেই একই অপরিবর্তনীয় রক্তদল


আলো পড়ে উদাসীন দেওয়াল

পরিণত ভুতুড়ে নাট্যশালার প্রতিবিম্বে


একটা চোখের মণিকোঠায় নিজেকে পেয়েছি

যে চোখ আমাকে ঠাউর করছে তার শূন্য দৃষ্টিতে।


মুহূর্তরা ছড়িয়ে পড়ে। গতিহীন,

আমি থাকি এবং চলে যাই: আমি নিজেই আসলে এক বিরতি।




২. 

আর কোনো গতানুগতিক ধারণা নয়


সুন্দর মুখ

সূর্যের দিকে পাপড়ি মেলা কোনো এক তারাফুল যেন 

তাহলে তুমিও কি 

আমি পাতা ওল্টালেই মুখ ফেরাবে আমার দিকে।


ভুবনমোহিনী হাসি তোমার

যেকোনো মানুষই থেকে যাবে তোমার জাদুর ছত্রছায়ায়

ও, একটা পত্রিকার সৌন্দর্য যেমন।


কত কত কবিতা তোমাকে নিয়ে লেখা হয়ে চলেছে?

দান্তে কতগুলো তোমাকে লিখেছিলেন, বিয়াত্রিস?

তোমার বিমুগ্ধকর মোহের প্রতি

তোমাকে নির্মাণের কল্পনা।


কিন্তু আমি তো আর কোনো গতানুগতিক কিছু বানাবো না আজ

এবং তোমাকে নিয়ে এই কবিতাটাই শুধু লিখবো

না, না আর কোনো গতানুগতিক কিছু নয়।


এই কবিতাটা সকল নারীকে উৎসর্গ করলাম

যাদের সৌন্দর্যই তাদের নিজেদের মাধুর্যে

তাদের বুদ্ধিমত্তায়,

তাদের স্বভাবে,

কেবলমাত্র তাদের দেখতে যেমনটা তার ওপর নয়।


এই কবিতাটা তোমাকে হে নারীগন

যেন শেহেরাজাদ জেগে ওঠে ঘুম থেকে

প্রতিদিন একটি করে গল্প নিয়ে,

সেই গল্পটা যেটা পরিবর্তনের জন্য গান গায়

সংগ্রাম নিয়ে আশাবাদী:

জীবকে একত্রে ভালোবাসার জন্য সংগ্রাম

নতুনদিনের আবেগের জন্য সংগ্রাম

অবহেলিত সেইসব অধিকার নিয়ে সংগ্রাম

অথবা আরো একটা রাতে বেঁচে থাকার জন্য শুধু সংগ্রাম।


হ্যাঁ, যন্ত্রণার জগতে তোমাকেই নারীগন

তোমাকেই, এই চিরনির্বাহের বিশ্বে যারা উজ্জ্বল নক্ষত্র 

সেই তোমাকে, হাজার এক লড়াইয়ের যারা যোদ্ধা

তোমার প্রতি, আমার হৃদয়ের বন্ধু


এখন থেকে, আমার মস্তিষ্ক আর কোনো পত্রিকার দিকে নয় 

বরং, মগ্ন হবে রাতের ধ্যানে 

এবং এটা উজ্ব্বল নক্ষত্র সব 

এবং তাই আর কোনো গতানুগতিকতা নয়।



******************************************************************************************************



 রুমা ঢ্যাং অধিকারী

ব্ল্যাকহোলের আধার থেকে জন্ম নেওয়া নীলচে কথাগুলো যখন মনের ঘড়া ভর্তি করে দেয়--- পোড়া এই সভ্যতা থেকে, জলন্ত চিতা থেকে উঠে আসে কিছু ভাবনা, কিছু অন্তরালের কথা। অব্যক্ত সেই ভাবপ্রকৃতি গুমরায় আর তাকে ঘিরেই যেসব শব্দের ঘূর্ণিপাক - এক নীরব যন্ত্রণাবোধ সেসবই নির্জন সময়ের ভাবজগতে ডুব দিয়ে তুলে এনে এই উলুবনে ছড়ানো যেন মুক্তো-- শব্দের মায়াজাল-  কবিতার এই তো একমাত্র ধর্ম।  কবিতার দেয়ালে লেগে থাকা উত্তমপুরুষ থেকে সবপুরুষ অতিক্রম করার এক খেয়াল। হঠাৎ করে পাওয়া এক জগৎ -- কবিতাজগৎ--মনের তাগিদে লেখা মনের টানে। কবিতা এক অসুখের নাম -- আমি সেই অসুখেই ভুক্তভুগী এক রুগী। কবিতার বই--- বাইশ স্কোয়্যার ফুট (২০১৮)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন