মঙ্গলবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৩

নবনীতা





নবনীতা * দু'টি কবিতা







জিজ্ঞাসা

বরাবরের অযোগ্য প্রেমিকা আমি

সাজানো কথায়

দিনকে রঙিন করে তোলবার শিল্পিত ক্ষমতা

কোনোকালেই নেই আমার,

সুগন্ধি ধূপের মতো নিজেকে পুড়িয়ে

দৈনন্দিন গেরস্থালি সুবাসিত করাতেই

আমার যাবতীয় পরিপূর্ণতা৷


কখনো হতে পারিনি পোর্সেলিন ফুলদানির

রঙবাহারি কাগজের ফুল, বরং

ক্ষমতার দর্পিত তাপের সম্মুখ সমরে

আমি যেন ঘাসের বুকে ফুটে ওঠা

নেহাতই অকিঞ্চিতকর নামহীন এক ফুল—

যতবার মাড়িয়ে যাবে অভ্যস্ত অবহেলায়

ততবারই মাথা তুলব সহজাত প্রতিস্পর্ধায়৷


হয়ত তাই আমাদের গল্পগুলো চিরকালই রয়ে গেছে

শিরোনামহীন, অপঠিত ও প্রচারবিহীন৷


তবু প্রতি বসন্তে ফিরে ফিরে আসা বিবাগী বাতাস

বৎসরান্তে খামোখাই উসকে দেয়

কিছু বিস্মৃতপ্রায় সময়কে,

মরসুমি হাওয়া  আগন্তুকের  মতো এসে

অকস্মাৎ দুলিয়ে দিয়ে যায়

দেওয়ালে পরম অযত্নে ঝুলতে থাকা

ধুলো আর ঝুলমেখে ধূসর হয়ে আসা

কবেকার ফ্রেমবন্দি মনোক্রোম এক ছবি ৷


জানি চলে যাওয়া মানে সব সময়েই

চির বিচ্ছেদ এমন নয়,

তবু খুব একান্তে জানতে ইচ্ছে হয়—

আমি চলে গেলে

আমার থাকারও অধিক কিছু কি রয়ে যাবে

নান্দনিক ব্যস্ততার আনাচে-কানাচ জুড়ে,

যেমন থাকে শুকিয়ে যাওয়া রঙ অথবা

কালি ফুরিয়ে যাওয়া

কিছু বাতিল, তবু বেখেয়ালে ফেলতে না পারা কলম!





                     

ঋণ

এসো, আরো একবার সবকিছু ভুলে

সর্বান্তঃকরণে আনতমস্তক হই শব্দের কাছে৷


যদি আলোর নেহাত অভাব ঘটে

অকস্মাৎ যদি ঘনঘোর আঁধার নেমে এসে

চরাচর  তমসাবৃত করে,

যদি আচ্ছন্ন হয়ে আসে দৃষ্টি,

শংকিত হয়ো না৷


নিঃসঙ্কোচে উপুড় কোরো দৈন্যতার ঝুলি

বিনিময়ে বরং আরো একবার অকিঞ্চন হয়ে,

আরো একবার কেবলমাত্র

ব্যক্তিগত শোকের খড়কুটোকে জ্বালানী করে

প্রজ্জ্বলিত কোরো আদিম  ঐশ্বরিক  আগুন,

যা পথ দেখিয়েছিল

আমাদের পূর্বপুরুষ ও পূর্বনারীদের

দীক্ষিত করেছিল জ্ঞান ও বোধের পরম মন্ত্রে৷


এসো, আরো একবার

প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই আপন অনুভূতির মগ্নতায়৷


জীবৎকালেই যে চুকিয়ে যেতে হবে

বর্ণমালার প্রতি আমাদের যাবতীয় ঋণ৷


****************************************************************************



নবনীতা 

ব্যক্তিগত পছন্দে গৃহবধূ ৷ স্বনিযুক্ত পেশা হিসেবে শিক্ষকতার সাথে যুক্ত৷ শিকড় ও ডালপালা উত্তর চব্বিশ পরগণার মফস্বল অঞ্চলে৷ অনুবাদ করতে ও লিখতে ভালো লাগে৷ লেখার মাধ্যমে নিজেকে ভিন্নতরভাবে খুঁজে পেতে ভালো লাগে ৷  অনুবাদ ও  মৌলিক লেখা প্রকাশ "যুগ সাগ্নিক পত্রিকা", "নতুন মান্দাস পত্রিকা", "সাঁকো পত্রিকা", "গানপুকুর পত্রিকা", "ছায়াবৃত্ত পত্রিকা", "শাব্দিক পত্রিকা", "উত্তরপক্ষ কবিতা পত্রিকা"র মতো বিভিন্ন প্রিন্টেড ও ডিজিটাল পত্রিকায়৷


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন