শিল্প-সাহিত্যে ভূতগ্ৰস্ত অবস্থা
সৌম্য ঘোষ
'কল্পনা' মানবসত্তার অন্তর্লোকের এক বিমুর্ত অভিব্যক্তি। দেকার্ত বলেছিলেন, ভাবনাতেই মানুষের সত্তার পরিচয়। 'I imagine therefore I am.' এযাবৎকাল মানবসত্ত্বা যতটা এগিয়েছে, আত্মবিকাশ বা আত্মবিনাশের যতরকম উপকরণ জড়ো করেছে, এর সবের মূলে রয়েছে কল্পনা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে মানব-সত্তায় বা মানব-মননে ভাবনার চালক বা নিয়ন্ত্রক কে? শরীরের সমস্ত কর্মপ্রক্রিয়ার মতোই মস্তিষ্কই ভাবনার নিয়ন্ত্রক। মস্তিষ্কের ভিতরে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম রাসায়নিক ও বৈদ্যুতিন ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া চলে, তা যেমন শরীরের অন্তর্নিহিত ও বহিঃ প্রকাশিত সমস্ত কর্ম প্রক্রিয়ার মূল উৎস, তেমনি ভাবনারও। মস্তিষ্ক প্রতিনিয়তই ইমেজ বা রূপকল্প উৎসারিত করে। চেতন অবস্থাতে করে, ঘুমন্ত অবস্থাতেও করে। ঘুমন্ত বা জ্বরগ্রস্ত অবস্থায় যখন 'ইমেজ' উৎসারিত হয়, তখন তাকে আমরা 'স্বপ্ন' বলি। এই স্বপ্নের উপর চেতন মনের বা সত্তার কোন নিয়ন্ত্রণ থাকে না। আবার অনেক সময় দেখা যায়, মনন যদি সৃজনশীল বিষয়ের চর্চায় দীর্ঘদিন নিমগ্ন থাকে, তাহলে তার আপাত-অনিয়ন্ত্রিত কল্পনা বা ভাবনার মধ্যেও অনেকটা সৃজনশীলময়তা তৈরি হয়। সেই 'শৃঙ্খলা-সঞ্জাত' যে আপাত-অনিয়ন্ত্রিত কল্পনা, তাকে জ্বরগ্রস্ত বা ভূতগ্রস্ত অবস্থায় নিমজ্জিত করে, সেই 'সৃজন' বিশেষ এক বৈশিষ্ট্যে ঋদ্ধ হয়ে ওঠে।
অনেক সুরিয়ালিস্ট কবিতা বা ছবি এই পদ্ধতিতে সৃজিত হয়েছে, যা কালোত্তীর্ণ। দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে আনা যায়, প্রেমেন্দ্র মিত্রের "তেলেনাপোতা আবিষ্কার" বা বিষ্ণু দের "ঘোড়সাওয়ার"। "তেলেনাপোতা আবিষ্কার" রচনা আগে প্রেমেন্দ্র মিত্র জ্বরে কাহিল অবস্থার মধ্যে ছিলেন। সেই ঘোরের মধ্যেই সৃজন-কল্পনার উৎসারণ হয়। পরের দিন তিনি রচনা করেন তার বিখ্যাত "তেলেনাপোতা আবিষ্কার"। কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত বলেছেন, কবি এক ভূতগ্রস্ত অবস্থার মধ্যে থাকেন। দৃষ্টান্ত হিসেবে আরেকটি কবিতার কথা মনে পড়ে, কবি উৎপল কুমার বসু। 'টুসু আমার চিন্তামণি' কাব্যগ্রন্থের (১৯৯৯) ১৮তম কবিতাটি এরকম:
"ঘুম আর মোমিনপুরের মাঝামাঝি এক টুকরো বারান্দা রয়েছে।/ দুধ আর চা-পাতা রয়েছে --- কেউ কেটলিটা বসিয়ে দেবে কি?/ ফুটন্ত জলের শব্দে উঠে পড়ব --- মানুষজনের গানে--/ কাগজের নৌকাগুলো ওইদিকে ভেসে আসছে।/ কোন এক বিখ্যাত লোকের মৃত্যুদিন আজ।"
আপাতভাবে বাকপ্রতিমাগুলিকে অসংলগ্ন মনে হতে পারে। এরকম হয় অনেক সময়, কবির মনে এই শব্দগুলো পরপর এভাবেই এসে গেছে। তিনি লিখে গেছেন হয়তো কোনো রকম সম্পাদনা ব্যতিরেকেই। তবু এই আপাত অসংলগ্নতার ভিতর থেকেই এই শব্দমালা গভীরতর এক অর্থে অর্থান্বিত হয়ে গেছে এবং কবিতা হয়ে উঠেছে। ছবিতেও এরকম ঘটতে পারে। যেমন, গণেশ পাইনের ১৯৭৫-এ আঁকা 'বসন্ত' ছবিটি। একটি বৃক্ষ মানবী হয়ে উঠেছে। গাছের ডাল হয়ে উঠেছে তার বাহু। ফল দুটি হয়ে উঠেছে তার ভরাস্তন। সম্মুখভাগে একটি পশুর করোটি অন্ধকারে ভেসে আসছে একটি জলযানের মতো। প্রান্তবর্তী পরিসরে একটি মশাল জ্বলছে, যেন ঋজু কোন অস্থির ওপর জ্বলছে দীপশিখা। প্রজ্জ্বলিত অগ্নি যেন একটি তরবারির আদল পাচ্ছে। মগ্নচেতনা থেকে উঠে আসা অনিয়ন্ত্রিত ভাবনা এভাবে 'কল্পনা'র সাযুজ্য পেতে পারে।
এই 'মগ্নচেতনা'য় সৃজনশীল মানুষ একটা জ্বরগ্রস্ত বা ঘোরগ্রস্থ অবস্থায় থাকে। আপনি এই অবস্থাকেই বলতেও পারেন 'ভূতগ্রস্থ' অবস্থা। 'নিশি-পাওয়া' মানুষের মতো। কিছু মানুষ অবশ্য আছেন, জন্মগ্রহণ করেন ঘোর নিয়ে। সিদ্ধসন্তদের মধ্যে এমনটা হয়। একটা জীবন তার কেটে যায় ঘোরের মধ্যে। ভারতীয় বৈয়াকরণ দর্শনের মহাগুরু ভৃতহরির ভাষায় .... 'কল্পনা হলো শব্দখচিত বপু।' অর্থাৎ কল্পনার একটা শরীর আছে। আর সেই শরীর শব্দখচিত। 'শব্দখচিত' বলেই কবির খুব সুবিধা হয়। আর শিল্পী সেই শব্দের ধ্বনিকে তার ক্যানভাসে দৃশ্যতার ভাষায় রূপান্তরিত করে।
কাব্যসৃষ্টির প্রাক্কালে এই ভূতগ্ৰস্ত অবস্থা, এটাকে গ্ৰীক ভাষায় বলে 'ইগনেশিও' বা 'শো অফ ইগনেশন'(Biblical meaning ) । আবার Frenzyও বলে। একধরনের পাগলামি ( madness)।
'ভূতগ্ৰস্ত অবস্থা' বলা যায়। এই নিয়ে অনেক তর্ক আছে। Classical theoryতে একরকম, Romantic theoryতে আর একরকম। কেউ বলে 'ফ্রেঞ্জি', কেউ বলে 'ম্যাডনেস', কেউ বলে 'Rihgts of indignation'.
এর থেকে একটি থিওরি এসেছে রোমান্টিক লিটারেচারে, যেটাকে বলা হয় 'রাইটস অফ ইনস্পিরেশন'। এক ধরনের প্রেরণা। আধুনিককালে এটা খুব চ্যালেঞ্জেড । এই অবস্থাকে কেউ পছন্দ করে, আবার অনেকে অপছন্দ করে। এই ফ্রেনজি মনন-ভাবনার জন্য প্লেটো কবিদের পছন্দ করতেন না। তিনি তার রিপাবলিকে কবিদের স্থান দেননি। তিনি বলতেন কবিদের বিশ্বাস করো না। অথচ রোমান্টিকদের কাছে এটাই খুব 'ওয়েলকাম সিচুয়েশন'। এটাই নাকি প্রেরণা দেয়। এটা না হলে নাকি কবিতাই হবে না। এটা ভালো না মন্দ এ নিয়ে অনেক তর্ক পাল্টা তর্ক আছে। এই নিয়ে যুক্তি ও পাল্টা যুক্তির অনেক অবকাশ রয়েছে। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমার এই ঘোরটাকে ভালো লাগে। আবার সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, বিষ্ণু দে এটাকে ভূতগ্রস্ত অবস্থা বলতেন । তারা বলতেন, অনুপ্রাণিত কবিকে ভূতগ্রস্ত প্রাণীর মতো আমরা ডরাই। সুধীন্দ্রনাথ দত্তের নিজেরই কথা।
বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও গুরুত্বপূর্ণ ইতালিয়ান লেখক ইতালো ক্যালভিনোর (জন্ম১৯২৩) বলেছিলেন, লেখার সময় মনে হয় আমি ঘোরগ্রস্ত হয়ে যাই। জানি না কিভাবে লিখি। ফ্রয়েডের
''The interpretation of dreams" পড়লেও কিছুটা অনুধাবন করা যায়।
স্যামুয়েল টেলর কোলরিজের ‘কুবলা খান’ রচনার বৃত্তান্তের সাথে আপতিক মিল দেখি ‘বিদ্রোহী’ কবিতার । ‘আমি চিনেছি আমারে, আজিকে আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাঁধ’-এর মধ্যে ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’র খেই একই রকম আপতিক। নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ, বিদ্রোহী, কুবলা খান সবই যেন সেই
ভরগ্ৰস্ত অবস্থার ফসল।
কবিতা পড়া, কবিতাকে নিয়ে ভাবা এটা একটা বৌদ্ধিক ব্যাপার। এর জন্য পড়াশোনা করতে হয়, শিক্ষিত হতে হয় । একটা দীক্ষা লাগে। এটা একটা মত। যারা ক্লাসিক্যাল থেওরিকে পছন্দ করেন। আবার রোমান্টিক থিওরিতে যাদের বিশ্বাস তারা এই ঘোরগ্রস্থ অবস্থাকে পছন্দ করে। যারা আধুনিক কবি তাদের মধ্যেও অনেকের এই জ্বরগ্রস্থ বা ভূতগ্রস্থ অবস্থা তৈরি হয়। যদিও তারা টেকনিক্যালি এর বিরোধী। তারা মনে করে কবি কেন পাগলামি করবে? কবি পৃথিবীর মধ্যে সবথেকে সভ্য মানুষ । হি শুড বি আ ইমোশনালি ব্যালেন্সড। তার মধ্যে মানসিক সাম্য থাকবে । তার কাছে মানুষ যাবে স্বাস্থ্যের জন্য। অসুস্থতার জন্য তো যাবে না। এই কারণেই প্লেটো কবিদের পছন্দ করতেন না। কিন্তু বিশ্বজুড়ে যে রোমান্টিক পোয়েট্রি , পেইন্টিং বা মিউজিক এসবে প্রেরণায় রয়েছে এই রকম ভূতগ্রস্ত অবস্থা। আমরা যখন প্রেমে পড়ি। যৌবনের উন্মাদনা থাকে, তখন একরকম ভূতগ্রস্ত অবস্থা তৈরী হয়। এমনকি যারা সাধুসন্ত মানুষ যারা ঈশ্বর অন্বেষণে বেড়িয়েছেন, তাদের মধ্যে একধরনের পাগলামী থাকে। ভূতগ্রস্ত অবস্থা। খুঁজে বেড়ায় --- 'আমি কোথায় পাব তারে আমার মনের মানুষ যে রে।' বাউলরাও তাই। এরা তো মনের মানুষকে পাওয়ার জন্য ঘর-সংসার ছেড়ে দেয়। আমাদের পুরাণে-ইতিহাসে সর্বত্র এই পাগলামি বা ঘোরগ্রস্ত অবস্থার কথা পাওয়া যায়।
শংকরাচার্য সেই সাত বছর বয়সে উপনয়নের পর ঘর ছেড়েছিলেন তারপর আর বাড়ি ফেরেননি। একবার শুধু এসেছিলেন মাকে দেখা দিতে। অনেকের মতে শংকরাচার্য ৩২ বছর বয়সে মারা গেছিলেন ( ভিন্নমতও আছে)। সাধকের অন্বেষণ শেষ হলে বেঁচে থাকার তো আর কোন দরকার হয়না। পরমের সন্ধানে বেড়িয়েছি, ৩২ বছর বয়সেই যদি ব্রহ্মত্ব লাভ হয়ে যায়, তাহলে ৯২ বছর পর্যন্ত বাঁচার দরকার কি? স্বামী বিবেকানন্দের মৃত্যুকেও এইভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব বলেছিলেন, 'বেশি কাল বেঁচে থেকে কি হবে কি রে? তার দেখা পেলেই তো হয়ে গেল। ' ইংলিশে যাকে বলে রেভেলেশন, বাইবেল যাকে বলেছে এথিক্যালি।
শঙ্খ ঘোষের একটা বিখ্যাত প্রবন্ধ আছে, 'ঈশ্বরের এক মুহূর্ত' । একটা দিব্যদর্শন হয়ে গেল আর কবিতাটা হু হু করে নেমে গেল। এই ভূতগ্রস্ত অবস্থায় এক মুহূর্তের জন্য এক লহমার জন্য দেখা দিলেন তিনি, বিদ্যুৎ চমকের মত একটা রেভেলেশন হল মননে-চিন্তনে। অমনি মহাজাগতিক সব সূক্ষ সূক্ষাতিসূক্ষ রহস্য গোপন সত্যটি ধরা দিয়ে গেল। কবিতার বান ডেকে দিল।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরেরও নাকি এই রকম অবস্থা হয়েছিল। 'নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ' কবিতা রচনার আগে নাকি এইরকম অবস্থা হয়েছিল। চৌরঙ্গীর সদর স্ট্রীটের বাড়ির জানালার সামনে বসেছিলেন, সকালের আলো পড়াতে তিনি ঘোরের মধ্যে রচনা করেছিলেন কবিতাটি। সকালে আলো ঝর্ণার মতো এসে পড়েছিলো। তিনি একটানা কবিতাটি লিখেছিলেন। তাঁর 'বর্ষশেষ' কবিতাটির কথা বলা যায়। দীর্ঘ প্রায় সাতপাতার । কোথাও একটাও কাটাকুটি নেই স্ক্রিপ্টে। ওই অত বড় কবিতাটি তিরিশে চৈত্র একটা ঝড়-বৃষ্টির রাতে একটানা লিখেছিলেন। এক ধরনের জলস্রোতের মতো সুনামির মতো কবিতাটি হুড়মুড় করে চলে আসে। একটা ঘোর, একটা দর্শনের মধ্যে থেকে অবস্থান করে পরমকে উপলব্ধি করা। আর এই পরমই হলো কবিতা। কাজী নজরুল ইসলামের মধ্যে এইরকম 'ক্ষ্যাপামি' ছিল। ভূতগ্রস্ত অবস্থা। এক রাতের মধ্যে তিনি একটানা 'বিদ্রোহী' কবিতাটি রচনা করেছিলেন। সুনীল-শক্তির মধ্যেও এইরকম ভূতগ্ৰস্ত অবস্থার গল্প শোনা যায়। শিবরাম চক্রবর্তীর এরকম অনেক ঘটনার কথা আমরা শুনে থাকি।
কবিতা, মিউজিক বা পেন্টিং পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শিল্প। বিশেষত শেষের দুইটি। কারণ সুর বা ছবির আবেদন বিশ্বব্যাপী। এর কোন ভাষার বেড়া নেই। এই কবিতা , সুর বা চিত্র বুঝতে গেলে নিজেকে দীক্ষিত করে তুলতে হয়। একটা নান্দনিক বোধ থাকতে হবে। একদল তাত্ত্বিকের মতে, কবিতা হবে বিশুদ্ধ। pure poetry. তার শব্দ চয়ন হবে সুচিন্তিত এবং সুনির্দিষ্ট। কবির নিয়ন্ত্রণের লাগাম ছেড়ে বেরোবে না। কবিতা হবে সুচিন্তিত প্রকাশ। প্রতিটি কবিতার একটা অর্থ থাকবে। একটা বার্তা/ প্রেরণা থাকবে। এখানেই প্রশ্ন তুলছে রোমান্টিকবাদী তাত্ত্বিকেরা। তারা বলছে, 'what is the definition of meaning?' 'মানে' কি বুদ্ধি দিয়ে বোঝা যায়? কবিতা কি বুদ্ধি দিয়ে বুঝতে হয়? বুদ্ধি মানে তো
Scientific . বুদ্ধি মানে intellectual power. কিন্তু তাই দিয়ে তো কবিতা বোঝার ব্যাপার নেই। কবিতা তো ইন্টেলেকচুয়াল এক্সারসাইজ নয়। কবিতার মধ্যে এক নান্দনিক আনন্দকে অনুভব করতে হয় হৃদয়ের চেতনায়। এটা একটা মত। A.E. Houseman -এর বিখ্যাত গ্রন্থ "The name and nature of poetry" তে বলেছেন, many is intellect but poetry is not.
তাদের মতে একটা ইনস্পিরেশন তো লাগে। খিদে না পেলে যেমন খেতে ইচ্ছা করে না। কামনা উদ্বেলিত না হলে যেমন যৌনসঙ্গম ভালো লাগেনা। তেমনি করে কবিতার জন্য ভেতর থেকে যদি একটা তাগিদ না আসে, তাহলে 'কবিতা' আসেনা। এই মননসঞ্জাত তাগিদেই অনেক কবির মধ্যে এই ভূতগ্রস্ত অবস্থা সৃষ্টি হয়।
এটা নিয়ে অনেক তর্ক আছে, প্রতিতর্ক আছে।
খুব অনন্যভাবে আধুনিক কবিগণ বলেন, দুটোর মধ্যে একটা ভারসাম্য করতে পারলে ভালো হয়।
কবি, লেখক, সুরকার বা শিল্পীর সৃজন প্রক্রিয়ায় কল্পনা ক্রমশ বিস্তার লাভ করে। চেতন মনের বা সচেতন ভাবনার সমস্ত বাঁধাধরা গণ্ডিকে অতিক্রম করে তা হয়ে ওঠে স্বতঃস্ফূর্ত ও স্বয়ংক্রিয়। এই আপাত-বিচ্ছিন্ন বা আপাত-নিরর্থক কল্পলোকের আবেশ কবি বা শিল্পীকে একটা ঘোরগ্রস্ত অবস্থার মধ্যে আবিষ্ট করে। সেই প্রেরণায় হড়কা বানের মত সৃজিত হয়
কালজয়ী সব রচনা। হয়ে ওঠে অন্তর্নিহিত গভীরতর অর্থের দ্যোতনায় অর্থময়। একজন কবি বা শিল্পীর দীর্ঘ সাধনায় এইভাবেই বিশ্বগত কল্পনা তার মধ্যে একাত্ম হয়ে ওঠে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ
তাঁর "জীবনস্মৃতি"-র একটি অংশে কিছু ইঙ্গিত দিয়েছেন।
" স্মরণের তুলিতে কবিত্বের রং ফোটে ভালো।
প্রত্যক্ষের একটা জবরদস্তি আছে --- কিছু পরিমাণ তাহার শাসন কাটাইতে না পারিলে কল্পনা আপনার জায়গাটি পায়না। শুধু কবিত্বে নয়;
সকল প্রকার কারুকলাতেও কারুকর্মের চিত্তের একটি নির্লিপ্ততা থাকা চাই --- মানুষের অন্তরের মধ্যে যে সৃষ্টিকর্তা আছে কর্তৃত্ব তাহারই হাতে না থাকলে চলে না। রচনা আর বিষয়টি যদি তাহাকে ছাপাইয়া কর্তৃত্ব করিতে যায় তবে তাহা প্রতিবিম্ব হয় প্রতিমূর্তি হয়না।" (রচনাবলী ১৮, বিশ্বভারতী, পৃ: ৪০৮)
=================================
সহায়ক তথ্যসূত্র :---
(১) 'মননের মধু' অরিন্দম চক্রবর্তী। গাংচিল।
(২) 'সাহিত্য' রবীন্দ্র রচনাবলী, বিশ্বভারতী।
(৩) অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর , বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী।
(৪) ' The Psychology Of Imagination" , Jean Paul Satre.
(৫) The New testaman , Bible.
(৬) ঋগ্বেদ সংহিতা। হরফ প্রকাশনী।
(৭) সংস্কৃত সাহিত্য সম্ভার। নবপত্র প্রকাশন।
(৮) "কল্পনার হিস্টিরিয়া" এবং "ঈশ্বরের এক মুহূর্ত" -- শঙ্খ ঘোষ।
(৯) 'বিংশ শতকের চিত্রকলা: আধুনিকতার বিবর্তন' , মৃণাল ঘোষ। প্রতিক্ষণ, ২০০৫.
(১০) অধ্যাপক ড: সমীর কুমার মুখোপাধ্যায়।(অবসরপ্রাপ্ত) প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়।
***************************************************************************
পেশা অধ্যাপনা। হুগলী জেলার সদর চুঁচুড়া শহরে বসবাস। ৮০ দশক থেকে সাহিত্য চর্চা শুরু হলেও মাঝে বহুদিন লেখালিখি বন্ধ ছিল পারিবারিক সমস্যায়। প্রবন্ধ ও কবিতার মধ্যে নিজেকে খুঁজে পান।প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ দুটি -- "আগুনের গান" (২০২১), "শুন্যতার ডানায় ওড়ে বেদনা"(২০২২)।



কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন