বুধবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৩

অণুগল্প * পলাশ দাস





পিছন ফিরে তাকাই 

পলাশ দাস 


বাড়ি থেকে বেরিয়ে ঠিক কোথায় যাবে স্থির করেনি সুমিত। পাড়ার মোড়ের কাছে এসে একবার এদিকে-ওদিকে দেখে নিয়ে স্টেশনের দিকে হাঁটা শুরু করল। হাঁটছে আর পিছন ফিরে তাকাচ্ছে। 

সুমিত সৎ এবং ভদ্রলোক। তাই সাধারণভাবে জীবন কাটানো ছাড়া তার কাছে অন্য কোনো উপায় নেই। সেইমতো  রঙ ওঠা জামা, প্যান্টের নিচে ছেঁড়া, ফেঁসে গেছে আরকি। অবশ্য ছেঁড়া প্যান্ট এখন লোকে দাম দিয়ে কেনে, এ তেমন প্যান্ট নয়। সৎ ভাবে বাঁচতে গেলে যেমনটা, ঠিক তেমনটাই। রঙচঙ তেমন একটা দেওয়া যায় না।  সুমিত জানে এই ব্যাপারটা, তাই কোনো আক্ষেপ নেই। মন্দ গতিতে হাঁটছে সুমিত আর মাঝে মধ্যে পিছনে ফিরে তাকাচ্ছে।  যারা সৎ, তারা নাকি বোকা। কিন্তু, মাঝেমাঝে পিছন ফিরে তাকায় কি? সুমিত তাকাচ্ছে। কি দেখছে পিছনে? 

প্যান্টের পকেটে রাখা ফোনটা বেজে উঠল। খুব ধীরে হলেও ফাঁকা রাস্তা বলে বেশ শোনা যাচ্ছে। টুং টাং একটা সাদামাটা রিংটোন বাজছে। সৎ ভদ্র মানুষের ফোনে কোনো বাহারি রিংটোন বাজে না। সুমিত বলে বাজাতে নেই আরকি। এটাও এক ধরনের স্ট্যাটাস মেনটেন। পকেট থেকে ফোনটা বার করল সুমিত, দেখল বিজনের ফোন। বিজন অফিসে সুমিতের পাশের টেবিলে কাজ করে। খুব চটপটে, সুমিতের বিপরীত ধরনের। ফোনটা রিশিভ না করলে যদি বিজন কিছু বুঝে যায়, তাই রিসিভ করল। তৎক্ষণাৎ ফোনের উল্টোদিক থেকে ভেসে এলো, “কি গুরু, আজ এলে না যে?” অফিসে সবাই সুমিতকে গুরু বলে সম্বোধন করে। ‘গুরু’ শব্দটি শুনলেই সুমিতের নিজেকে কেমন নায়ক নায়ক মনে হয়। যদিও সুমিত সিনেমা তেমন দেখে না। বিশ্বাস করে ভদ্র লোকেরা সিনেমা কম দেখে, ওই টুকটাক মাঝেসাজে। অবশ্য এই নিয়ে একটা দ্বিতীয় মতও ঘোরে ওর মনের মধ্যে। সুমিত এখনও বিয়ে করেনি, তাই প্রথম মতটা বেশ জোর খাটায়। এরই মধ্যে উল্টো দিক থেকে বিজন আবার বলে উঠল, “কোথায় হারালে? তোমার জ্বর শুনলাম? সত্যি? অবশ্য তুমি তো ঢপ দেওয়ার লোক নও! তা এখন কোথায়?” কি বলবে ভাবতে ভাবতে বলে ফেলল, “ওষুধের  দোকানে। পরে কথা বলব।” বলেই কথা না বাড়িয়ে ঢোক গিলে ফোন প্যান্টের পকেটে। রাস্তাটা এতক্ষণ যেন ট্রাফিকে ফেঁসে ছিল এবার সহজ হল। গতকাল অফিসে বসের কাছে খুব কথা শুনেছে সুমিত। ওই সৎ হলে যা হয়। অন্যের ভুল ধরিয়ে দিতে গিয়ে কেস। তারপর আজ সকালে প্রথমবারের জন্য মিথ্যে কথায় অফিস ডুব। সকালে হঠাৎ ছুটি বেশ ভালো লাগছিল। কিন্তু বেলা গড়াতে না গড়াতেই অফিসের দুটো ফোন, তারপর থেকে কেমন একটা অস্বস্তি গলার কাছে চেপে বসছে। সন্ধ্যেয় না পেরে একটু বাইরে বেরিয়েছে। তাও শান্তি নেই! এখানেও ফোন তাড়া করছে। আবার হাঁটছে সুমিত আর পিছনে ফিরে ফিরে তাকাচ্ছে। 




***********************************************************************************************************



 পলাশ দাস

জন্ম:- 27 মার্চ, 1989,বারাসাত।
স্থায়ী বসবাস বারাসতে। পিতা- প্রদ্যুৎ দাস, মাতা- কৃষ্ণা দাস।
2018 সালে প্রথম কবিতা প্রকাশ,কলকাতা শব্দহরিণ পত্রিকায় সাত্যকি নামে(পরিবার প্রদত্ত নাম পলাশ দাস)। পরবর্তীতে নিজ নামেই লেখা প্রকাশ। লেখা বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে বা হচ্ছে।কবিকথা, কাগজের ঠোঙা,কালধ্বনি, পদক্ষেপ,সাহিত্য সৃজনী, সাগ্নিক, অবেক্ষণ, অর্বাচীন,মুখর,কবিতা সীমান্ত, আখরকথা, কবিতা নগর,ষোলো আনা, ঝিলম,ভোরের সাঁঝপথ,কবিতা কুটির, আজকের কুরুক্ষেত্র,বিবস্বান,নৌকা প্রভৃতি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন