লেডিকিনি
শুভাশিস ঘোষ
রথযাত্রাতেই শুরু হয়ে গেছে প্রতিমার কাঠামো বাঁধার কাজ। বরাবরের মতই পোটোপাড়ার কেষ্ট পাল অস্থায়ী সংসার পেতেছে রাজবাড়িতে। এবার পুজোর জাঁক একটু বেশিই হবে। বারমহলে অন্তত তেমনই খবর। চাকর-বাকরদের মধ্যে কানাঘুষোর বিরাম নেই। বিলেত থেকে মায়ের সাজ আসার ফরমাস নাকি পেশ করেই দিয়েছেন রাজামশাই। যদিও প্রতিবারেই সাগর পেরিয়ে ডাকে আসে সেই সাজ।
জন্মাষ্টমীর দিনেই ডাক পড়েছিল ভীম নাগের। কলকাতার সেরা ময়রা। কার ব্যাটা দেখতে হবে তো ! জনাই থেকে এসে পরাণ নাগ যখন বৌবাজারে প্রথম দোকান দিয়েছিল , রাতারাতি তার মিষ্টির সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল কলকাতাময়। এখন তার ছেলে ভীমের হাতে নাকি জাদু আছে। তাই এবার ডাক পড়েছে তার। তড়িঘড়ি ভিয়েন বসল রাজবাড়িতে। চাকর বাকরদের সবাই প্রায় তিন চার পুরুষের রাজভৃত্য। বাপের জন্মে কেউ শোনেনি রাজবাড়িতে এত আগে ভিয়েন বসেছে। সেই কবে পলাশীর যুদ্ধ হল আর সাহেবদের জয়ের আনন্দে শোভাবাজারে মায়ের পুজো শুরু হল। সেবার তো ক্লাইভ সাহেব এসেছিল এ বাড়ির পুজোয়। রাজা নবকৃষ্ণের সেই পুজো এবার একশো বছরে পড়ল। তাই কি এবার এত জাঁক ?
মাসখানেক ধরে চলল নতুন নতুন মিষ্টি তৈরির মহড়া। ভীম নাগের হাতের জাদুতে তৈরি হয় নিত্য নতুন মিষ্টি। কোনটাই নাকি ঠিক পছন্দ হয় না রাজামশায়ের । অবশেষে গাওয়া ঘি আর তুলতুলে ছানায় ভীম নাগের হাতে তৈরি হল এক অভিনব মিষ্টি। অন্দরমহলের সবার নাকি মনে ধরল সেটা। রাজাও খুশি ময়রাও খুশি। তার পর এল বহু প্রতীক্ষিত এই দিন। আজ মহাষ্টমী। সন্ধিপুজো শুরুর আগেই মেমসাহেবের হাত ধরে ফিটন থেকে নামলেন ক্যানিং সাহেব। বেজে উঠল সানাই। সাহেব আর লেডি ক্যানিং-এর আপ্যায়নে এল ভীম ময়রার নতুন মিষ্টি। ময়রা বললে মেমসাহেবের নামে আমার মিষ্টির নাম রেখেছি 'লেডিকিনি' ! খুশিতে ভরে উঠল মেমসাহেবের মুখ। পকেট থেকে দুটো গিনি বার করে ভীমের হাতে দিলেন সাহেব। রাজামশাই বললেন , " ধরো হে ভীম , তোমার বখশিস। তুমি তো বড়ো দাঁও মারলে হে !" একগাল হাসি নিয়ে ভীম বললে ," রায়বাহাদুর খেতাবের চেয়েও এটা বড়ো দাঁও ?"
******************************************************************************************************
জন্ম ২৫ আগষ্ট ১৯৬৬। বেড়ে ওঠা দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার শিল্পশহর বজবজে। বানিজ্য বিভাগে স্নাতকোত্তর, ইনস্টিটিউট অব কষ্ট এন্ড ওয়ার্কস এ্যাকাউন্টেট অব ইন্ডিয়ার স্বীকৃত পেশাদার। পেশা সূত্রে বিভিন্ন কর্পোরেট হাউজ ঘুরে বর্তমানে রিলায়েন্স জিও-তে কর্মরত। দক্ষিণ বঙ্গের সংবাদ সাপ্তাহিক 'বার্তা এখন'-এর প্রধান সম্পাদকের দায়িত্বে ২০০২ থেকে। সংবাদ প্রতিবেদন, প্রবন্ধ, রম্যরচনায় বিচরণ তিন দশকের ওপর। ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা,ছড়ায় সমৃদ্ধ লিটলম্যাগ সহ বিভিন্ন বানিজ্যিক পত্র-পত্রিকা। প্রকাশিত প্রবন্ধ সংকলন একটি, গল্প সংকলন দুটি। 'শিল্পের জন্য শিল্প' নয়, 'মানুষের জন্য শিল্প'তে পূর্ণ বিশ্বাস। তাই কঠিন বাস্তবের মাটিতে পা রেখেই সাহিত্য চর্চা।



কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন