মহিষাসুর ওরফে হুদুড় দুর্গা
প্রদীপ কুমার দে
মহিষাসুর কোন অশুভ শক্তির প্রতীক নয়। শহীদ!
বহু কাল থেকে ইতিহাসবিদ এবং গবেষকেরা এই অসুরজাত সমন্ধে গবেষণা চালাচ্ছেন।
প্রাচীন জনপদ বোঙ্গাদিশম এর মহান সম্রাট ছিলেন অনার্য খেরোয়াল উপজাতীয় হুদুর দুর্গা ওরফে বোঙগাসুর ওরফে মহিষাসুর।। অসুরজাত।
মূলতঃ কৃষি নির্ভর ছিল এই অসুর আদিবাসীরা।
আর্যরা আক্রমন করলে বলবান মহিষাসুরের কাছে হেরে যায়। উপয়ান্তর না পেয়ে ছলনার আশ্রয় নেয় আর্যরা। সন্ধি করার নামে মহিষাসুরের সঙ্গে ওদের এক নারীর বিবাহ দেন। এবং সেই নারীই মহিষাসুর কে হত্যা করেন। এবং আর্যরা তখন রাজ্য দখল করে। অসুর জাতে তখন দ্বিতীয় কোনো শক্তিশালী পুরুষ কেউ ছিলো না। অসুর সম্প্রদায় হার মানে। যা ওরা মেনে নিতে পারেনি। এটাকে ষড়যন্ত্র বলে। কারণ অসুরেরা কোন নারীর গায়ে হাত দিত না। আর্যরা এই সুযোগেরই সদ্ব্যবহার করে।
ওদের কুলগুরুর আদেশে আদিবাসী অনার্য অসুর জাতিরা সরস্বতী নদীতে স্নান সেরে মহিলাদের বস্ত্র পরিধান করে পলায়ন করে। রাঁচি, পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়ে আশ্রয় নেয়। পরে নানা স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। এরাই ক্রমে সাওতাল জনজাতি।সেই থেকেই এই অসুর সম্প্রদায়ের আদিবাসীরা এই দূর্গা পুজাকে মেনে নিতে পারেনি। তাদের মতে মহিষাসুর কোনো খারাপ ব্যক্তি ছিলেন না। তাকে বধ করা হয়নি। এটা একটি নারকীয় হত্য।
এই কদিন এরা ঘরের দরজা জানালা বন্ধ রাখে। যাতে পুজোর কাঁসর ঘন্টা আর ঢাকের আওয়াজ তাদের ঘরে না প্রবেশ করে। এইসময় তারা শোকের উৎসব "দাসাই" নৃত্যের মাধ্যমে ক্রোধ প্রকাশ করেন। মহিলারা সাদা শাড়ি পড়েন। তারা শোকে মহিষাসুরের উদ্দেশ্যে বলেন - হে মহান বীর, আমাদের পূর্বজ, আমাদের প্রনাম নাও -- তোমাকে দেবী দুর্গা ছল করে হত্যা করেছে।
মহিষাসুর এদের পূর্বপুরুষ এবং মহান নেতা। দুর্গা পুজার নামে এই নেতার অপমান করা হয় -- এটাই তাদের বিশ্বাস।
তাই পুজোর পঁনেরো দিন পর তারা বাঁদান উৎসব পালন করে। ধামসার তালে তারা নেচে ওঠে। প্রতীক হিসাবে পশু মহিষের পুজো করে তারা।
বাল্মীকি রামায়ণে এই দূর্গা পুজার কথা লেখা নেই। কিন্তু কিত্তিবাসী রামায়ণে এর উল্লেখ আছে -- শরৎকালে রাম, রাবণ বধের জন্য একশো আটটি পদ্ম দিয়ে মায়ের পুজো করেছিলেন।
দুর্গা পুজোর কথা আমরা মার্কেন্ডীয় পুরাণে পাই।
***********************************************************************************************************



কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন