পাথুরে বোধনের কান্না শুনি কাশবনে
(উৎসর্গ:দীপ্তিশিখা দাস )
কবিতাগুচ্ছ * দীপংকর রায়
১৮১.
প্রাণের কমনীয়তা
গড়ে নেয় শরীর বাদ দিয়ে ….
কতটা সরু
না স্থুল ,
জানলা-দরজারা
দেখতে পায় নি তা তো !
ঘর দোরে বাতাস বয়
জানলা কপাট ঘিরে …
সে যে ঘুরে ঘুরেই
প্রকাশ করে তাঁর সুদূর
তবু তার সবটা প্রকাশযোগ্য নয় ।
বারান্দা জুড়ে হাওয়ারা গড়াগড়ি করছে ,
রোদ-ছায়া মেখে নিচ্ছে
আমাদের অনুভবেরা…..
ছায়া-মূর্তিতে
সেও উপুড় হয়ে
পৃথিবীর অফুরন্ত আলোবাতাসে আত্মহারা ….
হেসে উঠছে ?
১৮২.
কোন অনুভব
হাত-পা মেলবে ?
বেঁচে থাকায়
কোথাও উচ্ছাস নেই তো !
দিন যায় রাত আসে
ছোট্ট একটি কমায় লেখা হয়
ছিলাম কখনো সামান্য গুঞ্জন ,
সেই নামের চারপাশে !
যাওয়া আসায়
ফেরার নিশ্চয়তা
ছিল কি ?
সে যেন একটি বিন্দুর ঝড় , উঠেই
থেমে গেছে ।
নানা ভাবে এই সব কথপকথন ।
নাকি সে ছিল আপন ঘূর্ণন ?
বাতাসে ছলনাদের
নানা সাজপোশাক ;
ধুলোয় ধুলাক্কার
কালবৈশাখী …..
সে যেন তবু আমাদের দমকা হাওয়ার সুখ ,
আগুন প্রহসন ?
মনে হয় ফুরিয়ে গেল দিন , আজ আর একবারও মনে পড়েনি ..
যার কাছে রেখেছি সকল সময়ের বয়স ।
সেও রেখেছে তার
যত প্রসাধনী খুলে ।
১৮৩.
কোথাও এই যে
দেখা যায় রামধনু ,
অথচ মানুষের মনে
জন্ম হয় শুধুই দুঃসময় …..
সকলেই কি দেখতে পায় ?
হয়তো দেখে , হয়তো দেখে না ,
যে যার অহম খায় চিবিয়ে খানিকক্ষণ ।
কিছুই ভাবা নেই – ভাবনাদের বিন্দুরা ভোঁতা হয়ে গেছে?
ঘাড় কাত করে বসে আছে ক্লান্ত , অবসন্ন –
কে যেন চেয়ে থাকে
একা ঘুরে চলা জলের কাছে তবুও ,
তাঁর কাছে কতটা নতজানু সব ?
অনেক কালের বোধ ,
আজও চলেছে ঘুরে...
নিভৃতির সুতোয় বোনা
দুচোখের নির্লিপ্তি কারো ।
তাকে কেউ ধরে রেখেছে বুঝি ?
কত জল আসে আর যায় ......
সে আর আমিই একাকী , সে-ই সব কথা বলায় ;
বয়েসের হিসাব ধরে রাখেনি
যাদের সময় ।
এই সব তৃষ্ণার কথা
ঘুরে ঘুরে কেউ ,
গোপনে বুঝিয়েছে তাকে ;
সে কেমন রোমন্থন ?
একটুকরো জলের ভেতরের
উপুড় আকাশ সে ।
যাপনে মননের বিভঙ্গ মুদ্রা খানিক ?
১৮৪ .
অহেতুক শব্দ বোনে
অবাঞ্ছিত ;
মনকেমন আলোয়
হাত নাড়ে অনেক অপ্রসন্ন বেলা …
কৈশোর ছুটোছুটি করে
চাঁদ ওঠা সন্ধ্যায় ......
একখন্ড মেঘের ভাষ্কর্য
দূরের আকাশে
মুখ গুমরে পড়ে আছে ।
জল মাখছে
সে কি এখন শরীরে?
জল আর সে
একে অন্যের দোসর এখন , একটি কি দুটি গর্তে ।
শাপলা না পদ্ম , ফুটে উঠছে তবুও
তার মধ্যভাগে ?
জোনাকি বেলায়
কোন ফুলে কে যে এখন সেজে ওঠে
কার শেষ বেলায় !
শুরুতেই সে বিরহ গেয়েছিল ,
নাকি সব গান
আজ সব ফুলেই সমান ?
তুমিই বলো , তোমার বলার সুরেই আমার সব পথ
নদী হয়ে গেয়ে উঠবে …
বেহাগ ধরবে , না মল্লার ?
শেষ হল সকল আচমন ….
ওই দিকে স্তোত্র শেষ করে
কে যেন আ-ভূমি কুড়াচ্ছে
কার সন্ধ্যাবেলার ছায়া খানিক ?
১৮৫(১)
সাড়ে তিন পাক ঘুরে
কোন হিংস্রতা
গোপন করি ?
তা তো জানি না !
তরঙ্গে উত্তরোত্তর তাকেই করি মহা-ঘূর্ণি ….
আদরে আহ্লাদে এমন একটি মুখ , যার দুদিকেই আমি ?
ভাসি নক্ষত্রময় ....
সে যে কেমনে গায়
সে যে কেমনে মেনে নেয়
এই ঘুমজাগরণের জীবন!
ভাবতে ভাবতে
আর কত করবো স্মরণ , সেই সাড়েতিনপাক হিংস্রতা ---- ?
১৮৫(২)
দু 'এক পাক ঘুরে
আড়াই পাকে
কোন হিংস্রতা গোপন করি
তা তো জানি না !
উত্তরোত্তর তাকেই করি মহা-ঘূর্ণি ,
আহ্লাদে আদরে দেখি
এমন একটি মুখ
যার দুদিকেই আমি ,
ভাসি নক্ষত্রময় , নক্ষত্রময় ফুলঝুরি উড়ি …..
সে যে কেমনে গায়
কেমনে নেয় মেনে
এই ঘুম জাগরণ ;
ভাবতে ভাবতেই কত করব স্মরণ
আড়াই পাকের সেই আশ্রয়হীনতা —-
সে শুধু বাঁচা ?
রাত যেন একা হয়
গভীর কান্নায় কারো ;
একা হয় তাহার গভীরে আজও
হয়তো তুমি নও
অথবা তুমিই
কে সেই অন্তরাত্মা !/
দীঘল আঁখির মুখ ?
জানি কি —-
না জানি আজও তোমার ভেঙে আসা আলোর তরঙ্গ ….
না জানি রেখে ঠোঁট ,
সে কেমন চুম্বন ছিল ?
সেও কি তেতে ওঠা বালুকা বেলার
চোখের সুখ খানিক ?
বোঝার দোলায় দুলতে দুলতে রেখেছি সেই দু -চোখেই
দুখানি হাত কখনো !
বলো , বলো ওগো ঝরা মেঘের কুয়াশা মোড়া
পাহাড়ি রাতের কান্নাভেজা চোখের তারারা
সে কি তুমি !
নাকি তোমার ছায়ায় মুড়ে
অন্য কেউ এসে দাঁড়ালো
এই দুরত্ব ভেঙে আমার আলোয় ….?
বলো ,
ওগো কুয়াশার মেয়ে
সেও কি তোমারই বৃত্তে
অখন্ড আকাশ একখানি , হাজার তারায় তারায় ছাওয়া….?
******************************************************************************************************


কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন