সোমবার, ২ অক্টোবর, ২০২৩

গুচ্ছ কবিতা * দীপংকর রায়





পাথুরে বোধনের কান্না শুনি কাশবনে

(উৎসর্গ:দীপ্তিশিখা দাস )

কবিতাগুচ্ছ * দীপংকর রায় 


১৮১.


প্রাণের কমনীয়তা 

গড়ে নেয় শরীর বাদ দিয়ে ….


কতটা সরু 

না স্থুল ,

জানলা-দরজারা 

দেখতে পায় নি তা তো !


ঘর দোরে বাতাস বয়

জানলা কপাট ঘিরে …


সে যে ঘুরে ঘুরেই 

প্রকাশ করে তাঁর সুদূর  

তবু তার সবটা প্রকাশযোগ্য নয় ।


বারান্দা জুড়ে হাওয়ারা গড়াগড়ি করছে , 

রোদ-ছায়া মেখে নিচ্ছে 

আমাদের অনুভবেরা…..


 ছায়া-মূর্তিতে 

 সেও উপুড় হয়ে

পৃথিবীর অফুরন্ত আলোবাতাসে আত্মহারা …. 


 হেসে উঠছে  ?



১৮২.


কোন অনুভব 

হাত-পা মেলবে ?


বেঁচে থাকায় 

কোথাও উচ্ছাস নেই তো ! 

দিন যায় রাত আসে 

ছোট্ট একটি কমায় লেখা হয় 

ছিলাম কখনো  সামান্য গুঞ্জন ,

সেই নামের চারপাশে !


যাওয়া আসায় 

ফেরার নিশ্চয়তা 

ছিল কি ?


সে যেন একটি বিন্দুর ঝড় , উঠেই 

থেমে গেছে ।


নানা ভাবে এই সব কথপকথন ।

নাকি সে ছিল আপন ঘূর্ণন ?

বাতাসে ছলনাদের 

নানা সাজপোশাক ;

ধুলোয় ধুলাক্কার 

কালবৈশাখী …..


সে যেন তবু আমাদের দমকা হাওয়ার সুখ , 

আগুন প্রহসন ?

মনে হয় ফুরিয়ে গেল দিন , আজ আর একবারও মনে পড়েনি ..

যার কাছে রেখেছি সকল সময়ের বয়স ।


সেও রেখেছে তার 

যত প্রসাধনী খুলে ।



১৮৩.


কোথাও এই যে 

দেখা যায় রামধনু ,


অথচ মানুষের মনে 

জন্ম হয় শুধুই দুঃসময় …..


সকলেই কি দেখতে পায় ?

হয়তো দেখে , হয়তো দেখে না ,

যে যার অহম খায় চিবিয়ে খানিকক্ষণ ।


কিছুই ভাবা নেই – ভাবনাদের বিন্দুরা ভোঁতা হয়ে গেছে?

ঘাড় কাত করে বসে আছে ক্লান্ত , অবসন্ন –


কে যেন চেয়ে থাকে  

একা ঘুরে চলা জলের কাছে তবুও ,

তাঁর কাছে কতটা নতজানু সব ?


অনেক কালের বোধ ,

আজও চলেছে ঘুরে... 

নিভৃতির সুতোয় বোনা 

দুচোখের নির্লিপ্তি  কারো ।


তাকে কেউ ধরে রেখেছে বুঝি ?

কত জল আসে আর যায় ...... 

সে আর আমিই একাকী , সে-ই সব কথা বলায় ; 

বয়েসের হিসাব ধরে রাখেনি 

যাদের সময় ।


এই সব তৃষ্ণার কথা 

ঘুরে ঘুরে কেউ ,

গোপনে বুঝিয়েছে তাকে ;

সে কেমন রোমন্থন ?

একটুকরো জলের ভেতরের 

উপুড় আকাশ সে ।


যাপনে মননের বিভঙ্গ মুদ্রা খানিক ?



১৮৪ .


অহেতুক শব্দ বোনে 

অবাঞ্ছিত ;

মনকেমন আলোয়‌ 

হাত নাড়ে অনেক অপ্রসন্ন বেলা …

কৈশোর ছুটোছুটি করে

চাঁদ ওঠা সন্ধ্যায় ......


একখন্ড মেঘের ভাষ্কর্য 

দূরের আকাশে 

মুখ গুমরে পড়ে আছে ।


জল মাখছে 

সে কি এখন শরীরে?

জল আর সে 

একে অন্যের দোসর এখন , একটি কি দুটি গর্তে ।

শাপলা না পদ্ম , ফুটে উঠছে তবুও 

তার মধ্যভাগে ?


জোনাকি বেলায় 

কোন ফুলে কে যে এখন সেজে ওঠে 

কার শেষ বেলায় !

শুরুতেই সে বিরহ গেয়েছিল ,

নাকি সব গান 

আজ সব ফুলেই সমান ?


তুমিই বলো , তোমার বলার সুরেই আমার সব পথ 

নদী হয়ে গেয়ে উঠবে …

বেহাগ ধরবে , না মল্লার ?

শেষ হল সকল আচমন ….

ওই দিকে স্তোত্র শেষ করে

কে যেন আ-ভূমি কুড়াচ্ছে 

কার সন্ধ্যাবেলার ছায়া খানিক  ?



১৮৫(১)


সাড়ে তিন পাক ঘুরে 

কোন হিংস্রতা

গোপন করি ?

তা তো জানি না !


তরঙ্গে উত্তরোত্তর  তাকেই করি মহা-ঘূর্ণি ….

আদরে আহ্লাদে এমন একটি মুখ , যার দুদিকেই আমি ?

ভাসি নক্ষত্রময় ....

সে যে কেমনে গায় 

সে যে কেমনে মেনে নেয় 

এই ঘুমজাগরণের জীবন!

ভাবতে ভাবতে 

আর কত করবো স্মরণ , সেই সাড়েতিনপাক হিংস্রতা ---- ?



১৮৫(২)


দু 'এক পাক ঘুরে 

আড়াই পাকে 

কোন হিংস্রতা গোপন করি 

তা তো জানি না !


উত্তরোত্তর তাকেই করি মহা-ঘূর্ণি ,

আহ্লাদে আদরে দেখি 

এমন একটি মুখ 

যার দুদিকেই আমি ,

ভাসি নক্ষত্রময় , নক্ষত্রময় ফুলঝুরি উড়ি …..

সে যে কেমনে গায় 

কেমনে নেয় মেনে 

এই ঘুম জাগরণ ;


ভাবতে ভাবতেই কত করব স্মরণ 

আড়াই পাকের‌ সেই  আশ্রয়হীনতা —-


সে শুধু বাঁচা ?

রাত যেন একা হয়   

গভীর‌ কান্নায় কারো ;

একা হয় তাহার গভীরে আজও 


হয়তো তুমি নও 

অথবা তুমিই 

কে সেই অন্তরাত্মা !/

দীঘল আঁখির মুখ ?

জানি কি —-

না জানি আজও তোমার ভেঙে আসা আলোর তরঙ্গ ….

না জানি রেখে ঠোঁট ,

সে কেমন চুম্বন ছিল ?


সেও কি তেতে ওঠা বালুকা বেলার 

চোখের সুখ খানিক ?


বোঝার দোলায় দুলতে দুলতে  রেখেছি সেই  দু -চোখেই 

দুখানি হাত কখনো !


বলো , বলো ওগো ঝরা মেঘের কুয়াশা মোড়া

পাহাড়ি রাতের‌ কান্নাভেজা চোখের‌ তারারা 

সে কি তুমি !

নাকি তোমার ছায়ায় মুড়ে 

অন্য কেউ এসে দাঁড়ালো 

এই দুরত্ব ভেঙে আমার আলোয় ….?


বলো , 

ওগো কুয়াশার মেয়ে 


সেও কি তোমারই বৃত্তে 

অখন্ড আকাশ একখানি , হাজার তারায় তারায় ছাওয়া….?



******************************************************************************************************





*******************************************************************************************************

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন