সোমবার, ২ অক্টোবর, ২০২৩

গুচ্ছ কবিতা * স্বপন নাথ





স্বপন নাথ  * কবিতাগুচ্ছ 







আদিম

আটকানো গেল না পচা ঝিনুকের দূর্গন্ধ ।

মুক্তো  তুলবে বলে কাঁকর পরিসরে তন্নিষ্ঠ ছিল 

বিকেল ফুরলে ভ্রূণঘাতী পাঁচিল অন্বয়ী রসসঞ্চয়নে 

তুমুল সজারু।

শরীরে শরীর লেগে অটোফ্যাগী বিমোচন  আয়াম 

জলের গভীরে নেমে ধূমযৌন পানকৌড়ী 

খুঁজে নেয় রক্ত  আরাম ।

অভিসারে কামিনী  আতপ  আমিষাসি গন্ধ ছড়ায় ।

কেমোর থেরাপি বিষ রোমে ঠেকে ঊষর মরুভূমি 

আমাকে খুবলে খেয়ে ললাট পক্ষে বাতাসা ছড়িয়েছ তুমি ।

হরির লুটের ধূলো ভূঁয়ে পড়ে আগন্তুক আগুন 

আত্মদ্বীপে পুড়লো কই আফিম ?

কাঠামোই পুড়লো শুধু ; জলের  উপরে নাচে জলজ  আদিম।



নক্সা

সন্নিহিত কোণের ঠিকানায় ঠিকরে  পড়ে পিঠ ভেজানো আলো ।

এদিকে গরিষ্ঠ রক্ত , ওদিকে লঘিষ্ঠ গণনায়ক 

দেয়াল  জমকালো ।


আমি তার একপাশে ঘর অন্যপাশে পোষ্ট অফিস 

বানিয়ে দেবো বলে                         

বাড়ির  নকশায় রেখেছি স্টুডিও ।


রোজ ছবি তুলি

রোজ ছবি ধুই


বুড়ো সূর্যের আলোয়  টাঙিয়ে দিই ভোর ।


যদি কোনোদিন মধ্যদুপুরে নিজের ছায়ায় 

চমকে ওঠে থেঁতলানো রোদ-----



ঢেউ ভেঙে দেয়   

বারবার বাড়ি ফিরে আসি

শরণার্থী সমীক্ষায় উঠোনে দাঁড়াই ।


দেওয়ালের কার্ণিশভাঙা বালি

মৃতের কঙ্কালের মতো পায়ে ঠেকে কবর চেনায়! 


আঁতকে উঠি। অস্থি রাখবো কোথায় ?

জীবীজ ভূত নামাই।

দু পা কুহক পেরিয়ে ডিঙোলে কেঁচোসার

পুরনো আমসরের কয়লা ক্লোরোফিল শিয়র ছোঁয়


জন্মভিটের বাস্তুদেবতা ঢেউ ভেঙে দেয় - - -












বোয়াল 

আমাদের ছবি ছেঁড়া দিন  ।

দিন মানে প্রোটেম প্রতারক ।

ব্যাকড্রপে আলকাতরা মুখ গুহা

হাঁয়ের ভিতরে চোরা আপাদমস্তক ।


বধ্যভূমির দিকে বাধ্য হরপ্পা প্রস্তুত 

নাকি শিব স্বয়ং ত্রিচূড় ! 


শান্তির  অহিংস তেজ জ্বেলেদেবে গুহার  অগুরু

সেঁটে যাওয়া থেকে সন্ধি খুলে দেবে অরক্ত চোয়াল ।

কিছুই জানি না ।

মজ্জা খুবলে খেয়ে ধেয়ে আসে অতিকায় বোয়াল ।

দ্বন্ধ মুখরতায় প্রকট দাঁত বের করা ইঁট

সাক্ষ দেয়  অতীত সম্পর্ক ।

পলির ভিতরে নুন নাকি নুনের ভিতরে পলি !

পলি নুন ,নুন পলি ---


কাঁধ থেকে  নেমে পড়ে পরী

বেঁধে দেয় মানতের ঢিল ।

জলছাপ আকাশ মুখো  ক্ষণজন্মা নীল

আকাশ বাধ্যত উপুড় সিঁড়িভাঙা অঙ্কের সামিল।

বোয়াল অতশত বোঝে না ।

মক্সো পুরোটা 


শ্বাসমঞ্চে উত্তাপ ঘাই

অপূর্ণ উচ্ছিষ্টে বেদনা।


সিকোয়েন্স বুঝে বরফ কিংবা অম্বল

গায়ে পুরো টয়েটো  কম্বল।


আপাতত উপলক্ষ্য লামা।

ধর্মশালায় খুলে দেবে লঙ্গোর ।

মেরুদণ্ডহীন নড়নড়ে চিতি খুবলে খাক ক্যালকেরিয়া।

ছোটমাছ খেতে খেতে ছদ্মবেশে  অধরা পটু।

মিত্রভাবে মাতুল শকুনি কাঁধে নেয় আদতভার কুরুর।

লুহু পানে শ্বাপদ জানে বনকপোত চোখে হারায় না ।

জল জানে হাঙরের দাঁত ডুবজলে টিবিয়া ফিবুলা বাদ ।

সতর্ক সন্নিবেশ।চোয়াল বাড়ে না।

বিপদটা বোয়ালে ; বেটা সর্বত্রগামী 

ভূর্জপত্র চেটে নেয় কব্জি  আঙ্গুল ।

মধ্যযামে কর্ণ কদাচ সৎ

মিত্র বধে স্বয়ং সাধক ; কাঁধে নেয় কুরুর জোয়াল।

দূর্যের এতোই প্রতাপ !

বাঁক পরুতে সড়কি ও টুপিতে আড়াল 

মজ্জা খুবলে খেয়ে ধেয়ে আসে অতিকায় বোয়াল ।



*********************************************************************************************************



স্বপন নাথ 

পিতা : বলাই চন্দ্র দেবনাথ।মাতা:শ্রীমতি মায়া নাথ।গ্রাম-বেটিয়ারী, ডাকঘর- নলপুর,  থানা-সাঁকরাইল, জেলা- হাওড়া,পেশা- শিক্ষকতা ।
নেশা-লেখা , মূলত কবিতা ও প্রবন্ধ ।
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : আটটি। প্রথম প্রকাশ (2006)বাতুল বালিয়াড়ি। পর্যায়ক্রমে মৃত্যুজপ শীলিত পরিক্রমা, চন্দ্র হলো না,সেই হরিণী যেই হরিণী, দ্বীপজন্ম, আয়াত পেরনো জল, গ্রহণ,   প্রভৃতি । সবকটিই শ্রদ্ধেয় কবি শঙ্খ ঘোষের তদারকিতে প্রকাশিত । প্রকাশিতব্য "ছিপ ধরা প্রহর "2022কোলকাতা বইমেলা ।
"আয়াত পেরনো জল" কাব্যগ্রন্থটি 2020 অন্নদাশঙ্কর রায় স্মৃতি পুরস্কারে মনোনিত হয়েছিল। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আবৃত্তি বিভাকর সম্মানে ভূষিত ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন